পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্মৃতিস্তম্ভ।
২০৫

 যে উদ্দেশ্যে অন্ধকূপহত্যার করুণ-কাহিনী সভ্যজগতে প্রচারিত হইয়াছিল, তাহা যখন সুসিদ্ধ হইয়া গেল, তখন আর কেহ তাহার সত্য মিথ্যার আলোচনা করিলেন না! কালক্রমে সেই সকল কথা ইংরাজলিখিত ইতিহাস-পৃষ্ঠায় সিরাজদ্দৌলার শতধিক্কৃত দুর্দ্দান্ত নামের সঙ্গে চিরসংযুক্ত হইয়া, পরবর্ত্তী লেখকসম্প্রদায়ের কল্পনাপ্রবাহ খরতর করিয়া দিয়াছে। আজ বহুবৎসরের বিলুপ্ত কাহিনীর চিতাভস্মাচ্ছন্ন জীর্ণ কঙ্কাল আলোড়ন করিয়া, কে তাহার রহস্যভেদ করিবে? যে সন্দেহ মুতক্ষরীণের অনুবাদক ফরাসী পণ্ডিত হাজি মুস্তাফাকে বিস্ময়াবিষ্ট করিয়াছিল, সে সন্দেহ আর দূর হইল না। যতই আলোচনা হউক, ইতিহাসলেখকদিগের নিকট অন্ধকূপকাহিনী চিরদিনই সন্দেহপূর্ণ থাকিবে; কেবল কল্পনানিপুণ ভারতীর বরপুত্রগণ কখন কখন বিমুক্ত গগনের নক্ষত্র-লোক হইতে কবিতাবৃষ্টি করিয়া অন্ধকূপ-হত্যার করুণকাহিনী জনসমাজে জাগরূক করিয়া রাখিবেন।

 ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় যে, কেবল অন্ধকূপ-হত্যাই এদেশে বৃটিশ রাজশক্তি সংস্থাপিত হইবার মূলকারণ।[১] তাহাই যদি সত্য হইত, তবে তদনুরূপ স্মৃতিস্তম্ভ দেখিতে পাইতেছি না কেন? কানপুরের হত্যাকাণ্ডে স্মৃতিস্তম্ভ সযত্নে সুরক্ষিত হইতেছে; মণিপুরের হত্যাকাণ্ডকে চিরস্মরণীয় করিবার জন্য স্মৃতিচিহ্ন সংস্থাপিত হইয়াছে; অথচ যাহারা অন্ধকূপ-কারাগারে জীবনবিসর্জ্জন করিয়া বৃটিশরাজশক্তি সুসংস্থাপিত করিল, সেই সকল হতভাগাদিগের স্মৃতিচিহ্নের জন্য একটি ইষ্টকস্তম্ভও দেখিতে পাই না কেন? ইহা কি বিস্ময়ের স্থল নহে?

  1. The Great battles of the British Army.