পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৪
সিরাজদ্দৌলা।

আর কেহ বাহিরে আসিতে স্বীকার করিল না। ইংরাজের আদেশে কক্ষদ্বার অবরুদ্ধ হইয়া গেল। তাহার পর যখন দ্বার উন্মুক্ত হইল, তখন সংজ্ঞাশূন্য ৪৫ জন হতভাগার অবসন্ন দেহ টানিয়া বাহির করিতে হইল;—ভয়ে, রণশ্রমে, গলদঘর্ম্মে, গ্রীষ্মাতিশয্যে, দমবন্ধ হইয়া না জানি কত ক্লেশেই তাহাদের প্রাণবিয়োগ হইয়াছিল![১] জ্ঞানোজ্জল ঊনবিংশ শতাব্দীর সুসভ্য সহৃদয় বৃটিশশাসনে যে এরূপ ভয়ানক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হইয়া গেল, ইহার জন্য কয়জন ইতিহাস-লেখক লজ্জায় অধোবদন হইয়াছেন? যুদ্ধাবসানে বন্দীদিগের ভাগ্যে অনেক সময়ে এরূপ নিদারুণ নির্যাতন উপস্থিত হইয়া থাকে;—তাহারা অন্নজল পায় না, বিশ্রাম করিবার উপযুক্ত অবসর পায় না, কখন কখন নৃশংসস্বভাব প্রহরিগণের নির্যাতনে জীবন্মৃত হইয়া পড়ে। এ সকল যুদ্ধব্যাপারের অপরিহার্য্য অপকীর্ত্তি;—কেহই ইহার গতিরোধ করিতে পারেন না। কিন্তু যাঁহারা একদিন স্বদেশে গ্লেন্‌কোর হত্যাকাণ্ডে রুধির-কর্দ্দমে কলঙ্কিত হইয়া, এদেশে আসিয়া কত শত স্থানে ভীষণ হত্যাকাণ্ডে পাশবশক্তির পরিচয় প্রদান করিয়াছেন, যাঁহাদের দয়া দাক্ষিণ্যের অমোঘ নিদর্শনস্বরূপ কত শত হতভাগা ভারতবাসীর জীর্ণকঙ্কাল হিন্দু স্থানের অশ্বখশাখায় বহু বৎসর পর্যন্ত দোদুল্যমান ছিল, যাঁহাদের প্রতিহিংসাতাড়িত উদ্ধত সেনাদল কানপুরের শত শত নাগরিকদিগকে সন্দেহমূলে বা ঈর্ষাবশতঃ অবিচারে শোণিতলেহন করাইয়া তাহার পর

  1. “The doors were opened, and behold! they were all dead. Unconsciously the tragedy of Holwell's Black Hole had been reenacted. Forty five bodies,—dead from fright, exhaustion, fatigue, heat and partial suffocation—were dragged into light.” The Crisis in the Punjab, p. 162.