পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৪
সিরাজদ্দৌলা।

 পথশ্রম দুর করিবার জন্য হুগলীতে বিচিত্র পটমণ্ডপ সুবিস্তৃত হইয়াছিল। সেখানে আসিতে না আসিতে, অভ্যর্থনার সমারোহে জলস্থল টলমল করিয়া উঠিল। সেকালের বাদশাহ বা নবাবেরা যেখানে ছাউনী ফেলিতেন, সেই স্থান বহুজনাকীর্ণ রাজনগর হইয়া উঠিত। চারিদিকে যথাযোগ্য দূরস্থানে পাত্রমিত্র ও সামন্তবর্গের পট্টাবাস, তাহার বাহিরে চক্রাকারে সেনানিবাসের সহস্র সহস্র বস্ত্রগৃহ, তাহার পার্শ্বদেশে অগণিত বিপণিশ্রেণী;—কেন্দ্রস্থলে বিচিত্র কারুকার্য্যখচিত সুরচিত কনকপদ্মবিভূষিত নবাবের গর্ব্বোন্নত পটমণ্ডপ;—সেই হস্ত্যশ্বপদাতিসেনা, সেই প্রহরগণনানিপুণ প্রহরিদল, সেই সর্ব্বজনভৈরব মোগলবিভবের সমুজ্জ্বল চিত্রপট শ্মশানভূমিকেও নন্দনশোভায় উদ্ভাসিত করিয়া তুলিত, দ্বারে দ্বারে দৌবারিকদল করালকৃপাণস্কন্ধে নিঃশব্দে পদচালনা করিয়া বেড়াইত, প্রভাতে সায়াহ্নে রাজবৈতালিকগণের তানলয়সংযুক্ত সুমধুর যন্ত্রসঙ্গীত বায়ুভরে দূর দূরান্তরে ভাসিয়া চলিত, তিমিরাবগুণ্ঠিত নিশীথ-সময়েও প্রদীপ্ত প্রদীপালোকে চারিদিক ঝলমল করিত!

 হুগলীর পটমণ্ডপে সিরাজদ্দৌলার দরবার বসিল। সে দরবারে ওলন্দাজ ও ফরাসিবণিকগণ গললগ্নীকৃতবাসে আনুগত্য স্বীকার করিবার জন্য সসম্ভ্রমে উপঢৌকনহস্তে উপনীত হইলেন। ওলন্দাজেরা ৪॥ লক্ষ এবং ফরাসিরা ৩॥ লক্ষ টাকা ‘নজর’ প্রদান করিলেন। অতঃপর ইংরাজদিগের কথা উত্থাপিত হইল। তাঁহাদিগকে একেবারে দেশ বহিষ্কৃত করা যে সিরাজদ্দৌলার অভিপ্রায় নহে, সে কথা বুঝাইয়া দিয়া তিনি ওয়াটস্ এবং কলেট সাহবকে মুক্তিদান করিলেন, এবং হলওয়েলের সংবাদ জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। সেনাপতি মীরমদন ইতিপুর্ব্বেই নবাবের অজ্ঞাতসারে হলওয়েল এবং তাঁহার তিনজন সঙ্গীকে