পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
সিরাজদ্দৌলা।

বসিালে ইচ্ছামত লোককে নবাব করিতে পারিতেন। সরফরাজের অত্যাচারে মর্ম্মপীড়িত হইয়া সকলে মিলিয়া সেই চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইলেন; কিছুদিনের মধ্যেই বাদশাহের অনুমতি আসিল।

 সরফরাজের পিতা সুজাখাঁর নবাবী আমলে হাজি আহমদ ও আলিবর্দ্দী খাঁ নামে দুইজন সুশিক্ষিত প্রতিভাসম্পন্ন মুসলমানের বড়ই প্রাধান্য হইয়াছিল। তাহারা দুই সহোদর সুজা খাঁর দক্ষিণবাহু হইয়া প্রথমে মুর্শিদাবাদের মন্ত্রভবনে, পরে উড়িষ্যা ও পাটনার রাজধানীতে রাজকার্য্যে নিযুক্ত হইয়াছিলেন। আলিবর্দী পাটনার নবাব বলিয়া পরিচিত ছিলেন; লোকে তাঁহাকেই সিংহাসনে বসাইবার জন্য চেষ্টা করিতেছিল। সরফরাজ সেই গুপ্তমন্ত্রণার সংবাদ পাইয়া পাটনা অভিমুখে চলিলেন, আলিবর্দ্দীও বাদশাহের ফরমাণ পাইয়া মুর্শিদাবাদ অভিমুখে যাত্রা করিলেন। পথিমধ্যে গিরিয়ার প্রান্তরে উভয় নবাবের যুদ্ধ হইল। সরফরাজ নিহত হইলেন, আলিবন্দী সিংহাসনে আরোহণ করিলেন।

 আলিবর্দ্দী হিন্দু মুসলমানের প্রিয়পাত্র, শুদ্ধ, শান্ত, উৎসাহশীল, ন্যায়পরায়ণ, ধর্ম্মভীরু নরপতি বলিয়া পরিচিত। তিনি হিন্দুদিগকে সবিশেষ শ্রদ্ধা করিতেন; লোকে বলে তিনি যখন পাটনার নবাব, তখনই একজন হিন্দু সাধুপুরুষ নাকি তাঁহার সিংহাসন লাভের কথা গণনা করিয়া দিয়াছিলেন। মূল কাহিনী যাহাই হউক, আলিবর্দী যে বাপুদেব শাস্ত্রী ও তাহার শিষ্য নন্দকুমারকে সবিশেষ ভক্তি শ্রদ্ধা করিতেন। এরূপ জনরব এখনও মধ্যে মধ্যে শুনিতে পাওয়া যায়।[১]

  1. মহারাজা নন্দকুমার-শ্রীচণ্ডীচরণ সেন প্রণীত।