পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
সিরাজদ্দৌলা।

করিতে হইল, মীরজাফরকে চিনিতে পারিয়াও তাঁহাকে সঙ্গে রাখিতে হইল, এবং রাজা মাণিকচাঁদকে কলিকাতা প্রদেশে রাখিয়া অন্যান্য দলবল লইয়া পূর্ণিয়া যাত্রা করিতে হইল। একদল স্বয়ং নবাবের সঙ্গে রাজমহলের পথে ধাবিত হইল, এই দলে মীরজাফরকে সেনাপতি করিয়া সিরাজদ্দৌলা তাঁহাকে চক্ষে চক্ষে রাখিলেন। একদল রাজা রামনারায়ণের আজ্ঞায় পাটনা হইতে পশ্চিমপ্রান্ত আক্রমণ করিয়া শাহজাদার গতিরোধের আদেশ প্রাপ্ত হইল, আর একদল মহারাজ মোহনলালের আজ্ঞায় জলঙ্গী বহিয়া, পদ্মা উত্তীর্ণ হইয়া, সরদহ হইতে রাণী ভবানীর রাজ্যের ভিতর দিয়া স্থলপথে, পুর্ণিয়া আক্রমণের ভারপ্রাপ্ত হইল।[১]

 শওকতজঙ্গ ইন্দ্রিয়াসক্ত গর্ব্বোন্মত্ত অকর্মণ্য তরুণ যুবক। তিনি কাহারও পরামর্শে কর্ণপাত না করিয়া নিজেই সেনাদলের অধিনায়ক হইয়া নবাবগঞ্জ নামক স্থানে শিবির-সন্নিবেশ করিলেন। জীবনে একদিনের জন্যেও যুদ্ধক্ষেত্রে পদার্পণ করেন নাই, ধূমপুঞ্জে আকাশ অন্ধকার করিয়া কামানমুখে মুহুর্মুহুঃ গোলাবর্ষণ হইলে, কোথায় কেমন করিয়া সেনাসমাবেশ করিতে হয়, তাহার কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা নাই, অথচ প্রবীণ সেনানায়কগণ কোন বিষয়ে পরামর্শ দিবার চেষ্টা করিলে শওকতজ স্পষ্টই বলিয়া উঠেন যে,—তিনি এই বয়সে এমন একশত যুদ্ধে সেনাচালনা করিয়াছেন। শওকতজঙ্গ প্রভু,—সেনানায়কগণ পদানত ভৃত্য। তাঁহারা আর কি করিবেন? সসম্ভ্রমে ‘কুর্ণিশ’ করিয়া পটমণ্ডপে প্রস্থান করিতে লাগিলেন।

  1. Stewart's History of Bengal.