করিলেন।[১] তাঁহাকে দেখিয়া সেনাদলের সাহস হইবে কি, তাঁহার দৃষ্টান্তে সকলেই অবসন্ন হইয়া পড়িল। শত্রুশিবির হইতে মুহুর্মুহু লৌহপিণ্ড ছুটিয়া আসিতেছে, সাহসী সুচতুর প্রভুভক্ত ফৌজদারী ফৌজ মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে প্রচণ্ড পীড়নে ধরাশায়ী হইতেছে। সেনাপতিগণ অনন্যোপায় হইয়া নবাবকে চেতন করিবার জন্য নানারূপ চেষ্টা করিতেছেন; —কিন্তু হায়! শওকতজঙ্গ তখন একেবারে সংজ্ঞাশূন্য; কেবল চক্ষুর্দ্বয় মুদ্রিত করিয়া মধ্যে মধ্যে “বহুত আচ্ছা বিবিজান” বলিয়া সংগীতের তালরক্ষা করিতেছেন।
হায়! সিরাজদ্দৌলা! এই শওকতজঙ্গকে সিংহাসনে বসাইয়া তোমাকে রসাতলে দিবার জন্য যাহারা বদ্ধপরিকর হইয়াছিল, তাহারাই আজ ইতিহাসের নিকট সম্মানাস্পদ;—আর তুমি তাহাদের রাজা আশ্রয়দাতা, প্রতিপালক হইয়াও, শতকলঙ্কে কলঙ্কিত!
শওকতজঙ্গকে বহুক্ষণ বিড়ম্বনা ভোগ করিতে হইল না। অব্যর্থসন্ধান-নিপুণ সিরাজ সৈনিকের গুলি আসিয়া তীরবেগে তাঁহার ললাট ভেদ করিল; শওকতজঙ্গের সকল যন্ত্রণার অবসান হইয়া গেল!
পূর্ণিয়া শান্তমূর্তি ধারণ করিল। মহারাজ মোহনলাল তাহার শাসনভার গ্রহণ করিয়া যথাযযাগ্য ব্যক্তিগণকে রাজপদ মন্ত্রিপদ বিতরণ করিবার জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলেন।[২] সিরাজ রাজকোষ হস্তগত করিয়া শওকত-জননীকে সসম্ভ্রমে মুর্শিদাবাদে আনয়ন করিলেন; সেখানে সিরাজ-জননীর সহিত শওকত-জননী অন্তঃপুরে স্থানলাভ করিলেন।