পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজবল্লভ ও জগৎশেঠ।
২৫৩

না। পাত্রমিত্রগণের কুটিল ব্যবহারে তাঁহার স্বাভাবিক স্বাধীন হৃদয় ক্রমে ক্রমে অধিকতর স্বাধীন হইয়া উঠিয়াছিল; নিজে যাহা বুঝিতেন, কেহ তাহার প্রতিবাদ করিলেই সন্দেহ হইত যে, তাহার মধ্যে হয় ত কোন গুপ্তকল্পনা লুক্কায়িত আছে। লোকের ব্যবহারে তাঁহার হৃদয়ে এই রূপে অনেক সন্দেহের বীজ নিক্ষিপ্ত হইলেও, স্বভাবসুলভ সরল বিশ্বাস বড়ই প্রবল ছিল। ধর্ম্মের নামে, ঈশ্বরের নামে, অথবা কোরাণশপথ করিয়া পরম শত্রুও যাহা বলিত, তিনি অবলীলাক্রমে তাহাতে আস্থা স্থাপন করিতেন। এরূপ সরল বিশ্বাস না থাকিলে সুচতুর সিরাজদ্দৌলাকে কেহ সহজে প্রতারিত করিতে সক্ষম হইত না। কিন্তু সিরাজ-চরিত্রের যাহা সদ্‌গুণ তাহাই তাঁহার শত্রুদলের হাতে পড়িয়া তাঁহার সর্ব্বনাশের পথ সহজ করিয়া দিল। সকলেই বুঝাইলেন যে, ইংরাজ বণিকের যথেষ্ট শিক্ষা হইয়াছে, তাঁহারা আর অতঃপর উদ্ধত স্বভাবের পরিচয় দান করিবেন না, অতএব তাঁহাদিগকে কলিকাতায় পুনরাগমন করিবার অনুমতি প্রদত্ত হউক। সিরাজদ্দৌলাও বলিলেন— তথাস্তু! শওকতজঙ্গের পরাজয়ের পর স্বার্থরক্ষার জন্যই যে দশজনে মিলিয়া ইংরাজকে আবার এদেশে আনিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছিলেন,—সময় থাকিতে সিরাজদ্দৌলা তাহার গূঢ় মর্ম্ম গ্রহণ করিবার অবসর পাইলেন না।

 এ দিকে রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফর, মাণিকচাঁদ,সকলেই সিরাজদ্দৌলার বাহুবলের ও শাসনকৌশলের পরিচয় পাইয়া ভীত হইয়া উঠিলেন। তাঁহাদিগের উভয়সঙ্কট উপস্থিত হইল। কার্য্যানুরোধে তাঁহারা সকলেই সিরাজদ্দৌলাকে চিনিয়াছিলেন; সিরাজও তাঁহাদের সকলকেই চিনিবার অবসর পাইয়াছিলেন। তাঁহার উপর বিশ্বাস স্থাপন