পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
সিরাজদ্দৌলা।

সময়ে তাহার নিকট পরাজয় স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু সে বুদ্ধি কেবল দুষ্টবুদ্ধি! বনশার্দ্দূল যেমন অতি সংগোপনে নিঃশব্দপদবিক্ষেপে শিকারের অনুগমন করিয়া সময় ও সুযোগ পাইবামাত্র একলম্বেক চকিতের মধ্যে গ্রীবা ভাঙ্গিয়া রক্তপান করিয়া থাকে, সিরাজ সেইরূপ শার্দ্দূল বৃত্তি শিক্ষা করিয়াছিলেন। তাঁহার গতিবিধি এত সরল, কথাবার্ত্তা এত বালকোচিত এবং আচারব্যবহার এত সন্দেহশূন্য বোধ হইত যে, নবাব আলিবর্দ্দী কিছুতেই তাঁহার প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিতেন না।

 আলিবর্দ্দীর ধর্ম্মজীবনের প্রভাবে মুর্শিদাবাদের রাজপ্রাসাদ যেন পবিত্র তপোবন হইয়া উঠিয়াছিল; মসজেদে মসজেদে যথাসময়ে নামাজ হইত, দ্বারে দ্বারে গরীব কাঙ্গাল অন্নবস্ত্র লাভ করিত, ন্যায় ও ধর্ম্মানুসারে বিচারকার্য্য পরিচালিত হইত, অবসর সময়ে সুপণ্ডিত মৌলবীগণ শাস্ত্রব্যাখ্যায় চিত্ত্ববিমোহন করিতেন;[১] বারবণিতাশ্রেণী সিংহ দ্বার অতিক্রম করিতে পারিত না, নৃত্যগীত রাজকার্য্যের মধ্যে কলুষকালিমা ঢালিয়া দিবার অবসর পাইত না। ইহাতে বৃদ্ধের দিন কাটতে পারে, কিন্তু যুবক সিরাজদ্দৌলার দিন কাটিল না! মাতামহের সহবাস প্রথমে একটু অসুবিধাজনক এবং পরে একেবারেই অসহ্য হইয়া উঠিল। সিরাজ সেই সহবাসে অবরুদ্ধ হইয়া গৃহকোটরে ছটফট্ করিতেছিলেন; বুদ্ধিবলে তাহা হইতে মুক্তিলাভ করিবার জন্য এক নূতন উপায় অবলম্বন করিলেন।

 আলিবর্দ্দী ভাল করিয়া সিরাজ-চরিত্র বুঝিয়াছিলেন। কিনা জানি না; কিন্তু চতুর সিরাজদ্দৌলা ভাল করিয়াই আলিবর্দ্দীর চরিত্র অধ্য-

  1. Stewart's History of Bengal.