পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
সিরাজদ্দৌলা

সাহেবের হাত ধরিয়া সিংহাসনে আরোহণ করিয়া রাজমুকুট মাথায় তুলিয়াছিলেন! এইখানে মুসলমানের অস্তগিরি—এইখানেই আবার ইংরাজের উদয়াচল; কিন্তু তাহা এখন লোকচক্ষুর অন্তরাল হইয়াছে।

 হীরাঝিলের প্রমোদভবন নির্ম্মিত হইলে, দলবল লইয়া সিরাজদ্দৌলা বিলাস-তরঙ্গে দেহমান ভাসাইয়া দিলেন। কক্ষে কক্ষে, কুঞ্জে কুঞ্জে, ঝিলের শান্ত-শীতল-স্বচ্ছ-সলিলে এবং তীরতরুতলে—সর্ব্বত্রই বিলাসের অট্টহাস্য ছুটিয়া চলিল। মাতামহের প্রাচীন প্রাসাদে যে শক্তি গুহানিবদ্ধ নিঝরিণীর মত ধীরে ধীরে গোপনে গোপনে বহিয়া চলিত, হীরাঝিলে আসিয়া সেই শক্তি সমতলক্ষেত্রবাহিনী কালনাদিনী তরঙ্গমালিনী স্রোতস্বিনীর মত কালসমুদ্রের দিকে ছুটিয়া চলিল;—কে আর তাহার গতিরোধ করিবে? মাতামহ স্বাধীনতা দিয়াছেন, স্বহস্তে প্রমোদশালা গড়িয়া তুলিয়াছেন, প্রয়োজনানুরূপ বৃত্তি নির্দ্দেশ করিয়া ভোগবিলাসের পথ উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছেন; সুতরাং দৌহিত্রের বিলাস-স্রোত প্রবল বেগেই ছুটিয়া চলিল! হায়, সিরাজদ্দৌলা! এই বিলাস-স্রোতই যে সময়ে ধন, মান, জীবন এবং সিংহাসন পর্য্যন্তও ভাসাইয়া লইবে, তাহা জানিলে তোমার জীবন বুঝি হীরাঝিলের। বর্ত্তমান ইতিহাসকে এত বিষাদপূর্ণ করিতে পারিত না!

 নিত্য নূতন কুসঙ্গী জুটিতে লাগিল, নিত্য নূতন পাপের উৎস খণিত হইতে আরম্ভ করিল। অবশেষে সিরাজদ্দৌলা বুঝিলেন যে, নবার-দত্ত নির্দ্দিষ্ট মাসিকবৃত্তিতে আর ইচ্ছানুরূপ পাপলিপ্সা চরিতার্থ করা অসম্ভব। চতুর সিরাজ কৌশলক্রমে অর্থসংগ্রহ করিবার জন্য এক নূতন উপায় উদ্ভাবন করিলেন। মাতামহকে পাত্রমিত্র লইয়া