পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দৌহিত্রের কৌশল।
২১

হীরাঝিলের নুতন প্রাসাদে পদধূলি দিবার জন্য সসম্ভ্রমে সাদর নিমন্ত্রন করিয়া পাঠাইলেন;—আলিবর্দ্দী আল্লাদে আটখানা হইয়া পড়িলেন।

 এই সময়ে মুর্শিদাবাদের নবাব-দরবারে অনেক রাজা মহারাজা উপস্থিত থাকিতেন; আলিবর্দ্দী সকলকে সঙ্গে লইয়া মহাসমারোহে হীরাঝিলে শুভাগমন করিলেন। অভ্যর্থনার ক্রটি নাই, সাদর সম্ভা- ষণের বিরাম নাই—কেহ লতানিকুঞ্জে, কেহ শীতল শিলাখণ্ডে, কেহ বা সোপানশ্রেণীতে যথেচ্ছ বিশ্রামলাভ করিয়া,কখন গঠন-সৌষ্ঠবের প্রশংসায়, কখন সেকালের কারুকার্য্যের সহিত একালের শিল্পীদিগের ঝুটা কাজের সমালোচনায়, কখন বা সঙ্গীদিগের সঙ্গে কথাকৌতুকে সকলে মিলিয়া নবাবের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। নবাব একাকী প্রাসাদ-পরিদর্শনে গিয়াছেন, পরিদর্শন শেষ হইলেই বিস্তৃত কক্ষে দরবার বসিবে। কিন্তু যতই বিলম্ব হইতে লাগিল, ততই সকলে - অধীর হইয়া উঠিতে লাগিলেন। নবাব কোথায়, এতক্ষণেও পরি- দর্শন শেষ হইতেছে না কেন, নয়নে নয়নে সকলেই পরস্পরকে এই সকল কথা জিজ্ঞাসা করিতে আরম্ভ করিলেন।

 এদিকে সিরাজদ্দৌলা নবাবকে একাকী প্রাসাদ-পত্মিদর্শনে আহ্বান করিয়া কক্ষে কক্ষে ভ্রমণ করিতে করিতে কৌশলক্রমে একটি কক্ষে বন্দী করিয়া ফেলিয়াছেন। বৃদ্ধ মাতামহ যতই দ্বার হইতে দ্বারান্তরে যাইতেছেন, ততই রুদ্ধদ্বারের বাহিরে দাঁড়াইয়া দৌহিত্র উচ্চ করতালি দিয়া অট্টহাস্যে হৰ্মতল প্রতিশব্দিত করিয়া তুলিতেছেন। কিছুক্ষণ এ কৌতুকে নবাব বড়ই আমোদ অনুভব করিলেন; কিন্তু শেষে যখন একটি দ্বার খুলিল না, তখন বাহিরে আসিবার জন্য সিরাজকে দ্বার খুলিয়া দিতে অনুরোধ করিলেন। বালক-বুদ্ধির নিকট প্রবীণ নবাব