পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
সিরাজদ্দৌলা।

পরাজিত হইয়া কৌশল-সংগ্রামে বন্দী হইয়াছেন,—সমুচিত অর্থদণ্ড না পাইলে বিজয়ী সিরাজদ্দৌলা তাঁহার বন্ধন-মোচন করিবেন না! নবাব কত বুঝাইলেন, প্রচুর অর্থদানের অঙ্গীকার করিলেন; চতুর সিরাজ সময় বুঝিয়া বলিতে লাগিলেন—যুদ্ধশাস্ত্রে নগদ অর্থই একমাত্র মুক্তিপত্র, রাজা বাদশাহের মুখের কথায় বিশ্বাস কি? নবাব নিরুপায় হইয়া সমবেত রাজা মহারাজার কথা উল্লেখ করিয়া বলিতে লাগিলেন—যাহা হইবার তাহা হইয়াছে, এ কথা বাহিরে প্রকাশিত হইলে, সকলে বড়ই উপহাস করিবে। সিরাজ আরও সুযোগ পাইয়া বলিলেন-বৃদ্ধ নবাবের পককেশ রাজা মহারাজাদিগের নিকট যদি এতই মূল্যবান বস্তু, তবে তাঁহারই কেন অর্থদানে নবাবের বন্ধনমোচন করুন না?[১]

 নবাব হারিলেন; রাজা মহারাজা সকলে এই সংবাদ শুনিয়া চিন্তিত হইয়া উঠিলেন। তাঁহার সিরাজকে জানিতেন; জানিতেন যে, সিরাজ যাহা ধরিয়া বসেন, কেহই তাহা ঠেলিয়া ফেলিতে পারে না! অগত্যা’ যাঁহার কাছে যাহা ছিল, সমস্ত একত্র, করিয়া কিঞ্চিদধিক পাঁচ লক্ষ টাকা সিরাজকে দিয়া সকলে মিলিয়া নবাবের বন্ধন-মোচন করিলেন।[২]সিরাজ এরূপ বালকোচিত পরিহাসপূর্ণ চতুরতার সঙ্গে এই

  1. Grant's Analysis of Finances of Bengal.
  2. এই উপলক্ষে সিরাজদ্দৌলা নগদ ৫০১৫৯৭ টাকা পাইয়াছিলেন। কালক্রমে তাঁহাই “নজরাণ মনসুরগঞ্জ” নামে বার্ষিক বাজে জমায় পরিণত হইয়া তাঁহার স্বোপার্জ্জিত আয় বলিয়া নির্দিষ্ট হয়। ইংরাজদপ্তরের সেরেস্তাদার গ্রাণ্ট সাহেব স্বর- চিত রাজস্ববিষয়ক প্রস্তাবে এই কাহিনীর উল্লেখ করিয়া লিখিয়া গিয়াছেন যে, নবাব আলিবর্দ্দী দৌহিত্রের সঙ্গে পরামর্শ করিয়াই বাজে জমা বার করিবার জন্য এইরূপ কৌশলজাল বিস্তার করিয়াছিলেন। ইহা কিন্তু গ্রাণ্ট সাহেবের অনুমানমাত্র,—" ইহার কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ বর্তমান নাই।