পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মীরজাফরের মন্ত্রণা।
৩৬৭

মানসম্ভ্রম এবং জীবনরক্ষার সহায়তা কর।” মীরজাফর সসম্ভ্রমে যথারীতি রাজমুকুটকে কুর্ণিশ করিয়া বুকের উপর হাত রাখিয়া বিশ্বস্তভাবে বলিতে লাগিলেন, “অবশ্যই শক্রজয় করিব; কিন্তু আজ দিবা অবসান হইয়াছে, সিপাহীরা প্রভাত হইতে রণশ্রমে অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে, আজ সেনাদল শিবিরে প্রত্যাগমন করুক,—প্রভাতে আবার যুদ্ধ করিলেই হইবে।” সিরাজ বলিলেন, “নিশারণে ইংরাজসেনা শিবির আক্রমণ করিলে যে সর্ব্বনাশ হইবে?” মীরজাফর সগর্বে বলিয়া উঠিলেন, “আমরা রহিয়াছি কেন?”[১]সিরাজের মতিভ্রম হইল, তিনি মীরজাফরের মৌখিক উত্তেজনায় আত্মবিস্মৃত হইয়া সেনাদলকে শিবিরে প্রত্যাগমন করিবার জন্য আদেশ করিতে বাধ্য হইলেন। মহারাজ মোহনলাল তখন বিপুল বিক্রমে শত্রু সেনার দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন, তিনি সসম্ভ্রমে বলিয়া পাঠাইলেন যে, “আর দুই চারি দণ্ডের মধ্যেই যুদ্ধ শেষ হইবে, এখন কি শিবিরে প্রত্যাগমন করিবার সময়? পদমাত্র পশ্চাদ্‌গামী হইলে সিপাহীদল ছত্রভঙ্গ হইয়া সর্ব্বনাশ সংঘটন করিবে,—ফিরিব না যুদ্ধ করিব।”[২] এ সংবাদে মীরজাফর শিহরিয়া উঠিলেন, তিনি বিবিধ বিধানে সিরাজদ্দৌলার মনস্তুষ্টি করিয়া পুনরায় সংবাদ পাঠাইলেন যে, “ক্ষান্ত হও, শিবিরে প্রত্যাগমন কর।” রোষে ক্ষোভে মোহনলালের নয়নযুগল হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বিনির্গত হতে লাগিল; কিন্তু তিনি আর কি করিবেন? তিনি একজন মন্‌সবদার মাত্র, সমরক্ষেত্রে সেনাপতির আদেশ লঙ্ঘন করিতে পারিলেন না! যথা-সম্ভব শ্রেণীবদ্ধ হইয়া শিবিরের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। মীরজাফরের মনস্কামনা পূর্ণ হইল; তিনি তৎক্ষণাৎ ক্লাইবকে লিখিয়া

  1. Stewart's History of Bengal.
  2. মুতক্ষরীণ।