পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পলাশীর জয়স্তম্ভ।
৩৭১

গিয়াছে[১] মহেশপুরের কুঠির সাহেবেরা নাকি সেই আম্রকাষ্ঠে একটি সিন্ধুক প্রস্তুত করিয়া মহারাণী ভারতেশ্বরীকে উপঢৌকন পাঠাইয়া দিয়াছেন। এখন কেবল স্থাননির্দেশের জন্য একটি আধুনিক জয়স্তম্ভে লিখিত অছে:—

PLASSY

ERECTED BY THE BENGAL GOVERNMENT, 1883.

 এই স্বল্পাক্ষর ফলকলিপি ভিন্ন আরও একটি নিদর্শন বর্ত্তমান রহিয়াছে; তাহা একজন প্রভুভক্ত মুসলমান জমাদারের সমাধিস্তূপ। মুসলমান বীর সম্মুখ সংগ্রামে সিরাজদ্দৌলার সিংহাসন রক্ষার জন্য প্রাণপণে অস্ত্রচালনা করিয়া অবশেষে চিরনিদ্রায় অভিভূত হইয়া রহিয়াছেন। প্রতি বৃহস্পতিবারে বাঙ্গালী কৃষাণ কৃষাণীরা তাহার উপর ভক্তিভরে ফুল ফল তণ্ডুলকণা “সিন্নি” প্রদান করিয়া এখনও সেই পুরাকাহিনী সঞ্জীবিত রাখিয়াছে।

 পলাশি হইতে প্রস্থান করিয়া, পরদিবস—শুক্রবার প্রাতঃকালে[২] সিরাজদ্দৌলা মন্‌সুরগঞ্জের রাজপ্রাসাদে উপনীত হইলেন। বাঙ্গালা, বিহার উড়িষ্যার অদ্বিতীয় অধিপতি বহুসহস্রসিপাহীসুরক্ষিত সমরক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়া বীরশূন্য মুরশিদাবাদের আশ্রয়গ্রহণ করিলেন কেন? ইংরাজেরা

  1. H. Beveridge, C. S.
  2. ইংরাজেরা বলেন, সিরাজদ্দৌলা “দিবা দুই ঘটিকার” সময়ে পলাশি হইতে পলায়ন করিয়া “সেই রজনীতেই” রাজধানীর মহিলামণ্ডলীর বস্ত্রাঞ্চলের আশ্রয়গ্রহণ করিয়াছিলেন। মুতক্ষরীণে লিখিত আছে, তিনি “সায়ংকাল পর্যন্তও” যুদ্ধক্ষেত্রে অপেক্ষা করিয়া আত্ম-সেনানায়কদিগের “বিশ্বাসঘাতকতায়” বিপর্য্যস্ত হইয়া পলায়ন করিতে বাধ্য হন, এবং পরদিবস প্রাতঃকালে, অর্থাৎ “৬ মাহ সাওয়াল রোজ জুমাকো দো তিন ঘড়ি দিন চঢ়ে মনসুরগঞ্জ আ পহঁছা।” শ্রীল শ্রীযুক্ত ড্রেক সাহেব বাহাদুরের পলায়নে ইংরাজ-গৌরব যেরূপ কলঙ্কিত হইয়া রহিয়াছে;—সিরাজদ্দৌলা পলায়নে মুসলমানের নাম সেরূপ কলঙ্কিত হয় নাই!