সায়াহ্নে আর রত্নদীপালোকে রাজধানী উজ্জ্বলিত হইয়া উঠিল না;— রাজবৈতালিকের সুললিত যন্ত্র-সংগীত আর বায়ুভরে দুর দুরান্তরে মোগলের গৌরব-গীতি বিঘোষিত করিল না;—পার্শ্বচরগণ আর নবাব সিরাজদ্দৌলার আজ্ঞাপালনের অপেক্ষায় করজোড়ে কক্ষদ্বারে সম্মিলিত হইল না![১] রাজপুরী জনসমাগমরহিত শ্মশান-সৈকতের ন্যায় হায়! হায়! করিতে লাগিল! সেই শ্মশানভূমি বিকম্পিত করিয়া অদূরে মীরজাফরের বিজয়োন্মত্ত আগ্নেয়াস্ত্র ভীমকলরবে গর্জ্জন করিয়া উঠিল! সিরাজদ্দৌলা সুপ্তোথিতের ন্যায় চাহিয়া দেখিলেন;—মোগলের রাজ্যাভিনয়ের শেষ চিত্রপট উদ্ঘাটিত হইয়াছে; জনহীন পাষাণপ্রাসাদ যেন চিরবুভুক্ষিতের ন্যায় তাঁহাকেই গ্রাস করিতে আসিতেছে! তখন মাতামহের মমতানুলিপ্ত হিরাঝিলের বিচিত্র রাজপ্রাসাদ এবং বঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যার বলদর্পিত মোগলরাজসিংহাসন পশ্চাতে রাখিয়া, নবাব সিরাজদ্দৌলা পথের ফকিরের ন্যায় রাজধানী হইতে বাহির হইয়া পড়িলেন! কেবল একজন মাত্র পুরাতন প্রতিহারী এবং চিরসহচরী লুৎফউন্নিসা বেগম ছায়ার ন্যায় পশ্চাতে পশ্চাতে অনুগমন করিতে লাগিল।[২]
সিরাজ স্থলপথে ভগবানগোলায় উপনীত হইয়া তথা হইতে নৌকারোহণে পদ্মার প্রবল তরঙ্গ উত্তীর্ণ হইয়া, শৈশবের লীলাভূমি গোদা