পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নাগরিকাদিগের মত
৪০১

দ্বার উত্তীর্ণ হইবার সময়ে, কেহ অভ্যাসবশতঃও অভিবাদন করিল না; সেই বিচিত্র অট্টালিকার প্রত্যেক কক্ষবাতায়ন হইতেই যেন প্রবল প্রতিহিংসাতাড়িত বিকট অট্টহাস্য ধ্বনিত হইয়া উঠিল। সিরাজদ্দৌলা ইহার জন্য প্রস্তুত হইয়াই আসিয়াছিলেন; তথাপি সে সময়ে তাঁহার অধীর হৃদয়ে কত কি ভীষণচিন্তা জাগিয়া উঠিয়াছিল, তাহা কে বলিতে পারে?

 একাকী অন্ধকার কারাকক্ষে নিপতিত হইয়া বোধ হয় জীবনের আশা আবার জাগিয়া উঠিয়াছিল! শত্রুহস্তে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত ও বন্দীকৃত হইয়াও যে এতদিন জীবিত রহিয়াছেন, ইহাতেই বোধ হয় সিরাজদ্দৌলা ভাবিয়াছিলেন যে, মীরজাফর হয়ত আত্মহৃদয়ের স্নেহ মমতা বিসর্জ্জন দিতে না পারিয়া কোনরূপে তাঁহার গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করিয়া জীবনরক্ষা করিবেন।

 সিরাজদ্দৌলাকে জীবনদান করিতে সাহস হইল না; রাজসিংহাসন নিরাপদ করিবার জন্য আত্মহৃদয়ের স্নেহ মমতা বিসর্জ্জন দিতে হইল; স্পষ্টতঃ না হউক, প্রকারান্তরে সিরাজদ্দৌলাকে নিহত করিবার জন্যই তাঁহাকে মীরণের তত্ত্বাধীনে জাফরাগঞ্জে কারারুদ্ধ হইতে হইল! কিন্তু হায়! যাহাকেই এই হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করিবার জন্য আহ্বান করা হইল, সে-ই শিহরিয়া উঠিতে লাগিল; কেহই সহজে সম্মত হইল না। সিরাজদ্দৌলা নামে ইতিহাসে যত কলঙ্ক স্থানলাভ করিয়াছে, মুরশিদাবাদের লোকে ততদূর জানিত না; তাহারা জানিত সিরাজদ্দৌলা দেশের রাজা, ফিরিঙ্গীর শত্রু, আলিবর্দ্দীর স্নেহপুত্তল, সুকুমারকান্তি তরুণ যুবক, অশান্তত—যৌবনোন্মত্ত—উচ্ছৃঙ্খল—প্রবল প্রতাপান্বিত সুবাদার, সুতরাং তাঁহার বর্ত্তমান দুর্দ্দশা দেখিয়া লোকে তাঁহার দোষের কথা বলিয়া গিয়া ভাগ্যবিবর্ত্তনের ২৬