পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মীরজাফরের পদোন্নতি।
৩৩

 ১৭৪৭ খৃষ্টাব্দে নবাব আলিবর্দ্দী স্বয়ং মহারাষ্ট্র-দমনে বাহির হইতে পারিলেন না; ভগিনীপতি মীরজাফর খাঁকে সেনাপতি করিয়া পাঠাইয়া দিলেন। মীরজাফর “সিপাহসালার”[১] ছিলেন; তাঁহার অধীন সৈন্যদল যদিও নবাবের সৈন্য, তথাপি তাহারা সাক্ষাৎভাবে নবাব-সরকার হইতে বেতন পাইত না। নবাবী আমলে এখনকার মত রাজস্বনীতি প্রচলিত ছিল না। কেবল বাদশাহের প্রাপ্য রাজকর নবাব-দপ্তরে জমা হইত, তদ্ভিন্ন প্রত্যেক বিভাগের ব্যয় নির্বাহের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্মচারীর নামে ভিন্ন ভিন্ন জায়গীর নির্দিষ্ট থাকিত, সেই সকল জায়গীরের আয় হইতে তাঁহারা আপন আপন বিভাগের ব্যয় নিৰ্বাহ করিতেন।

 “জায়গীর আমীরুল-উমরা বশী”[২] নামে ১৮ পরগণার এক জায়গীর প্রধান সেনাপতির “জিম্মা” ছিল, তাহার আয় হইতে তিনি ইচ্ছামত আপন বিশ্বস্ত অনুচরদিগকে সৈন্যদলে গ্রহণ করিয়া নবাব দরবারে কর্তৃত্ব করিতেন। এইরূপ ব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় সেনাপতি দিগের পক্ষে সহসা বিদ্রোহী হওয়া সহজ ছিল। সেই জন্য নিতান্ত অনুগত ও অন্তরঙ্গ ভিন্ন আর কেহ এই সকল উচ্চ পদে নিযুক্ত হইতে পারিতেন না। আলিবর্দ্দী আপন ভগিনীপতি বলিয়া মীরজাফরকে

  1. Commandar-in-chief and Pay master-General of the Forces.' নবাবী আমলে এই পদের নাম ছিল,—“মীর বক্সী কুল” অথবা “সিপাহসালার অজম"; অনেকানেক পুরাতন জমীদারী-সমলে দেখা যায় যে, “সিপাহসালারকে” ঐ সকল সনদে স্বাক্ষর করিতে হইত। সামরিক বিষয়ে জমীদারগণ যে “সিপাহ সালায়ের” অধীন ছিলেন, ইহা তাহারই পরিচায়ক। সিপাহসালার ছিলেন বলিয়া মীরজাফর বাঙ্গালী জমীদারদিগের সহিত সুপরিচিত হইবার অবসর পাইয়াছিলেন।
  2. Grant's Analysis of Finarices of Bengal