পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোম্পানীর বাণিজ্য।
৫৩

 সিরাজ বাল্যকাল হইতেই ইংরাজ-চরিত্র অধ্যয়ন করিবার অবসর পাইয়াছিলেন। সেকালে নবাব-দরবারে ইংরাজ প্রতিনিধির যাতায়াত ছিল। নগরোপকণ্ঠে বাণিজ্যালয় স্থাপন করিয়া কাশিমবাজারের ইংরাজগণও সর্ব্বদাই ইতস্ততঃ বিচরণ করিতেন। ইহাদের কার্য্যকলাপ দেখিয়া সিরাজের ইংরাজ-বিদ্বেষ দূর হইল না; বরং ইহাদের প্রত্যেক কার্য্যের মধ্যেই গূঢ় অভিসন্ধি দেখিয়া সিরাজদ্দৌলা মনে মনে ইংরাজদিগকে ঘৃণা করিতে শিক্ষা করিলেন। বাল্যসংস্কার সহজে দূর হইবার নহে; বয়োবৃদ্ধিসহকারে সিরাজের সেই বাল্যসংস্কার ক্রমেই ঘনীভূত হইতে লাগিল।

 হীরাঝিলের প্রমোদভবন নির্ম্মিত হইবার সময় হইতে সিরাজদ্দৌলা সেই স্থানে নিজ নামানুসারে “মন্‌সূরগঞ্জ”[১] নামে একটী গঞ্জ স্থাপন করিয়াছিলেন।[২] সেই গঞ্জের সমুদয় আয় তাঁহার করায়ত্ত ছিল; সুতরাং কিসে সেই গঞ্জের উন্নতি ও আয়বৃদ্ধি হইবে, তাহার জন্য সিরাজদ্দৌলা সর্ব্বদাই সাধ্যমত চেষ্টা করিতেন। দেশী বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি না হইলে গঞ্জের শ্রীবৃদ্ধি হইতে পারে না; ইংরাজদিগের প্রকাশ্য ও গুপ্ত বাণিজ্যে দেশীয় ব্যবসায়ীদিগের ক্ষতি হইয়া বিদেশীয়দিগের লাভের পথ যতই বিস্তৃত হইতে লাগিল, সিরাজদ্দৌলা বিদেশী বণিকদিগের উপর ততই অসন্তুষ্ট হইতে লাগিলেন। ফরাশী, দিনামার, ওলন্দাজ প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিকদিগের বিনা শুল্কে

  1. সিরাজদ্দৌলার নাম—“নবাব মন্‌সূরোল-মোল্‌ক্-সিরাজদ্দৌলা শাহকুলী খাঁ মিরজা মোহম্মদ হায়বৎজঙ্গ বাহাদুর।”
  2. Grant's Analysis of Finances of Bengal.