পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
সিরাজদ্দৌলা।

 মাতামহের অসঙ্গত স্নেহ-পরায়ণতায় সিরাজদ্দৌলার বাল্যজীবনে সুশিক্ষার বীজ পতিত হইতে পারে নাই। স্বার্থ-সাধনের জন্য অনেকেই সুযোগ পাইয়া অপরিণামদর্শী তরুণ যুবককে প্রলোভনের পথে টানিয়া আনিয়াছিল! সেকালের নবাবদিগের মধ্যে ইন্দ্রিয়বিলাস বিশেষ দোষাবহ ছিল না; সুতরাং সিরাজদ্দৌলার রাজাপুরে অগণিত সেবাদাসী দেখিয়া যাঁহারা অপবাদ রটনা করিয়াছেন, তাঁহারা সেকালের সমাজনীতি লইয়া সিরাজদ্দৌলার সমালোচনা করেন নাই।

 সেকালের রাজা বাদশাহেরা সমাজ-নিয়ম উল্লঙ্ঘন করিয়া যথেচ্ছভাবে জীবনযাপন করিতেন। তাঁহাদের সহিত অল্পলোকেই সামাজিক ব্যাপারে মিলিত হইবার অধিকার পাইত। অনেক সময়ে হয় ত লোকে তাঁহাদিগকে চর্ম্মচক্ষে দর্শন করিবারও অবসর পাইত না। গোপনে রাজান্তপুরে বা প্রমোদভবনে তাঁহারা যে সকল ধর্ম্মবিগহিত কার্যে লিপ্ত হইতেন, বাহিরের লোকে তাহার বিন্দু বিসর্গও জানিতে পারিত না। সুতরাং কল্পনা-লোলুপ জনসাধারণ অনেক সময়েই তিলে তাল করিয়া তুলিত।

 সিরাজের নিকটে কেহ আলিবর্দ্দীর ন্যায় ধর্ম্মজীবন ও পুণ্যকার্যের প্রত্যাশা করিত না। ইন্দ্রিয়বিকার মুসলমান ভূপতিদিগের সাধারণ কলঙ্ক,—দুই এক জন সে কলঙ্কের হাত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া লোকসমাজে পূজনীয় হইয়াছেন বলিয়া, লোকে সকলের চরিত্রেই সেরূপ জিতেন্দ্রিয়তা দেখিবার আশা করিত না। সুতরাং অন্যান্য সদ্‌গুণ থাকিলে, লোকে নবাব এবং বাদশাহদিগের ইন্দ্রিয়বিকার লইয়া বিশেষ আন্দোলন করিত না! বরং কেহ কেহ স্বার্থসাধনের জন্য পাপপথের সহায়তা করিয়া ধনোপার্জ্জন করিতেও কুণ্ঠিত হইত না, এবং তাহার জন্য লোকসমাজে কেহই নিন্দাভাজন হইত না।