পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
সিরাজদ্দৌলা।

স্থানে উপস্থিত হইবামাত্র, স্থানীয় সম্ভ্রান্ত জমিদার এবং ফৌজদারগণ যে তাঁহার মনস্তুষ্টি ও শুভদৃষ্টিলাভের প্রত্যাশায় গায়ে পড়িয়া অনেক সুন্দরী ললনার সর্ব্বনাশ সাধন করিতেন, তাহা একেবারে অস্বীকার করিবার উপায় নাই।

 ছলে, বলে, কৌশলে এবং অর্থ-বিনিময়ে অনেক কুলকামিনী সিরাজের অঙ্কশায়িনী হইয়াছিলেন; কিন্তু সিরাজদ্দৌলা তাঁহাদিগকে নিশাবসানে বিগত-সৌরভ কুসুমস্তবকের ন্যায় আবর্জ্জনারাশির সঙ্গে রাজপথে ফেলিয়া দিতেন না। সকলেই যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে তাঁহার রাজান্তঃপুরে স্থানলাভ করিয়াছিলেন, এবং এইজন্যই তাঁহার অন্তঃপুরে সতর্ক প্রহরী সশস্ত্রশরীরে নিশিদিন দ্বাররক্ষায় নিযুক্ত থাকিত। সিরাজদ্দৌলার অধঃপতনের পর তাঁহার অন্তঃপুরে যে বহুশত রমণী প্রহরিবেষ্টিত হইয়া বাস করিতেছিলেন, তাঁহাদিগের সংখ্যা গণনা করিয়া ইংরাজ ইতিহাস-লেখকেরা শিহরিয়া উঠিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহারা কাহার রমণী, কি সূত্রে রাজান্তঃপুরে স্থানলাভ করিয়াছিলেন, কেহ তাহার তত্ত্বানুসন্ধান করেন নাই। কালক্রমে সেই সকল রমণীগণ যখন ইংরাজের কৃপায় বৃত্তি লাভ করেন, তখন প্রকৃত অবস্থা কঞ্চিৎ প্রকাশ হইয়াছিল, এবং তাঁহাদের মধ্যে অধিকাংশই যে সরফরাজ খাঁর বেগমমণ্ডলী, তাহা ইংরাজ-রাজের কাগজপত্রে উল্লিখিত হইয়াছিল। কিন্তু ইতিহাস-লেখকেরা আর ভ্রমসংশোধন করা প্রয়োজন বোধ করেন নাই।

 সিরাজদ্দৌলার সমসাময়িক ইংরাজ এবং মুসলমান ইতিহাসলেখকগণ তাঁহার জীবনকালে যে সকল ইতিহাস লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, তাহার মধ্যে তাহার অনেক কুকীর্ত্তির উল্লেখ আছে; কিন্তু গুর্ব্বিণীর গর্ভবিদা-