পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
সিরাজদ্দৌলা।

কারাগারে নিক্ষিপ্ত হইতেন, কাহারও জমীদায়ী অন্যের হস্তে সমর্পিত হইত, কাহারও বা “বৈকুণ্ঠবাসের” ব্যবস্থা হইত।[১]

 জমীদারদিগের সহায়তায় এবং জগৎশেঠের অনুকম্পায় আলিবর্দ্দী সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুতরাং তাঁহার শাসনসময়ে জমীদারদলই প্রকৃতপ্রস্তাবে সিংহাসনের মালিক হইয়া উঠিয়াছিলেন। আলিবর্দ্দী তাঁহদের সহিত বাহুতে বাহুতে মিলিত হইয়া শত্রুদলন করিতেন, এবং জমীদারিদলের মতামত না লইয়া কোন কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতেন না। সিরাজদ্দৌলার নিকট ইহা প্রীতিকর বলিয়া বোধ হইত না। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করিলে দুষ্টদল দমন করিবার জন্য যে স্বভাবতঃই আয়োজন করিবেন, তাহা সকলেই একরূপ আকারে ইঙ্গিতে বুঝিতে পারিলেন। সুতরাং আলিবর্দ্দীর রুগ্নদশায় সিরাজদ্দৌলাকে সাক্ষাৎসম্বন্ধে রাজকার্য্যে লিপ্ত হইতে দেখিয়া, জমীদারদল আতঙ্কিত হইলেন।

 এই সকল জমাদারদিগের মধ্যে সখ্যসংস্থাপন হইতে লাগিল। সকলেই ভবিষ্যতের জন্য উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিলেন। সেকালে রাজসাহীর জমীদারীই এদেশে, এমনকি সমুদয় ভারতবর্ষে, সর্ব্বাপেক্ষা সুবৃহৎ জমীদারী বলিয়া পরিচিত ছিল। তাহার চতুঃসীমা ভ্রমণ করিয়া আসিতে

  1. মুর্শিদ কুলীখাঁর শাসনসময়ে মুর্শিদাবাদে একটি গর্ত্তের মধ্যে যাবদীয় পুতিগন্ধময় পদার্থ সঞ্চিত রাখিয়া রাজত্বদানে অশক্ত জমীদারদিগকে তার মধ্যে তানিয়া আনিয়া নির্য্যাতন করিবার কথা শুনিতে পাওয়া যায়। ইহাকে সেকালের মুসলমানেরা ব্যঙ্গচ্ছলে “বৈকুণ্ঠ” বলিয়া ব্যাখ্যা করিতেন। মুসলমান ইতিহাসে এ কথার উল্লেখ নাই, কিন্তু সমসাময়িক ইংরাজের ইহা লিখিয়া গিয়াছেন। শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় ইহার সুতীব্র প্রতিবাদ করিয়াছেন।