পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
সিরাজদ্দৌলা।

ব্যবস্থা প্রচলিত রহিয়াছে;—বিধবার ব্রহ্মচর্য্য অক্ষরে অক্ষরে প্রতি পালিত হউক আর না হউক, বিধবাকে ধর্ম্মপথে রক্ষা করিবার জন্য শাস্ত্র, লোকাচার ও কর্ত্তব্যবুদ্ধি যে সকলকেই সমানভাবে অনুপ্রাণিত করিয়া রাখিয়াছে;—বিধবার অবগুণ্ঠন ভেদ করিয়া পাপদৃষ্টিতে তাহার অঙ্গে দৃষ্টিপাত করিলে নিতান্ত অসংষতচিত্ত পাপকর্ম্মনিরত নরাধম হিন্দুও যে মর্ম্মপীড়িত হইয়া লগুড় উত্তোলন করিবে বোধ হয় সিরাজদ্দৌলা ততটা বিশ্বাস করিতে শিক্ষা করেন নাই। স্বার্থসাধনের জন্য, অনেক হিন্দুসন্তান, কেহ কন্যা, কেহ বা ভগিনী দান করিয়া, মোগলের মনস্কামনা পূর্ণ করিয়াছিলেন। সুতরাং সিরাজদ্দৌলার বিশ্বাস ছিল যে, তিনি যখন সিংহাসনের ভাবী উত্তরাধিকারী, তখন ভয়ে হউক আর ভক্তিতে হউক যাহা চাহিবেন, লোকে তাহাই আনিয়া চরণতলে উৎসর্গ করিয়া দিবে। কেবল এইরূপ অন্ধ বিশ্বাসেই তিনি সাহস করিয়া অতুল ঐশ্বর্য্যশালিনী রাণী ভবানীর নিকট অর্থবিনিময়ে তারার রূপরাশি ক্রয় করিবার প্রস্তাব করিতে সাহসী হইয়াছিলেন।[১] ইহাতে সিরাজদ্দৌলার দুর্দ্দমনীয় হৃদয়বেগের পরিচয় রহিয়া গিয়াছে। এই দুর্দ্দমনীয় হৃদয়বেগ না থাকিলে, তাঁহার এরূপ মতিভ্রম হইত কি না, কে বলিতে পারে?

 কালক্রমে সিরাজের এই দুষ্টাভিসন্ধির কথা লোকে ভুলিয়া যাইত। যে পাপকল্পনা কল্পনামাত্রেই পর্য্যবসিত হইয়াছিল, তাহা ইতিহাস হইতে বহুদূরে পড়িয়া থাকিত। কিন্তু যাহারা স্বার্থসাধনের জন্য ধীরে ধীরে সিরাজদ্দৌলার অধঃপতনসাধনচেষ্টায় তাহার বিরুদ্ধে লোকচিত্ত প্রধূমিত

  1. দ্বাদশ নারী।