পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:ു . . সাঁতারাম রাজা কথা কহিলেন না। তখন নন্দা উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, “এই রাজপুরীমধ্যে আমার কি এমন কেহ নাই যে, এটাকে নামাইয়া দেয় ?” তখন সহস্র দর্শক এককালে “মার | মার ” শব্দ করিয়া কসাইয়ের প্রতি ধাবমান হইল। সে লম্ফ দিয়া মঞ্চ হইতে পড়িয়া পলাইবার চেষ্টা করিল, কিন্তু দর্শকগণ তাহাকে ধরিয়া ফেলিয়া, মারিতে মারিতে দুর্গের বাহিরে লইয়া গেল। পরে অনেক লাঞ্ছনা করিয়া, প্রাণ মাত্র রাখিয়া ছাড়িয়া দিল । t নন্দ জয়ন্তীকে বলিল, “মা ! দয়া করিয়া অভয় দাও। মা ! আমার বড় ভয় হইতেছে, পাছে কোন দেবতা ছলনা করিতে আসিয়া থাকেন। মা ! অপরাধ লইও না। একবার অন্তঃপুরে পায়ের ধূলা দিবে চল, আমি তোমার পূজা করিব।” তখন রাণী পৌরস্ত্রীগণ সমভিব্যাহারে জয়ন্তীকে ঘেরিয়া অন্তঃপুরে লইয়া চলিলেন । রাজা কিছু করিতে না পারিয়া সিংহাসন হইতে উঠিয়া গেলেন। তখন মহাকোলাহলপূৰ্ব্বক, এবং নন্দাকে আশীৰ্ব্বাদ করিতে করিতে দর্শকমণ্ডলী দুর্গ হইতে নিস্ক্রান্ত হইল। অন্তঃপুরে গিয়া জয়ন্তী ক্ষণকালও অবস্থিতি করিল না। নন্দ অনেক অনুনয় বিনয় করিয়া, স্বহস্তে গঙ্গাজলে জয়ন্তীর পা ধুয়াইয়া, সিংহাসনে বসাইতে গেলেন। কিন্তু জয়ন্তী হাসিয়া উড়াইয়া দিল । বলিল, “মা ! আমি কায়মনোবাক্যে আশীৰ্ব্বাদ করিতেছি, তোমাদের মঙ্গল হউক। ক্ষণমাত্র জন্য মনে করিও না যে, আমি কোন প্রকার রাগ বা দুঃখ করিয়াছি। ঈশ্বর না করুন, কিন্তু যদি কখনও তোমার বিপদ পড়ে, জানিতে পারিলে, আমি আসিয়া, আমার যথাসাধ্য উপকার করিব। কিন্তু রাজপুরীমধ্যে সন্ন্যাসিনীর ঠাই নাই। অতএব আমি চলিলাম।” নন্দ এবং পৌরবর্গ জয়ন্তীর পদধূলি লইয়া তাহাকে বিদায় করিল। উনবিংশ পরিচ্ছেদ রাজবাড়ীর অন্তঃপুরের কথা বাহিরে যায় বটে, কিন্তু কখনও ঠিক ঠিক যায় না। স্ত্রীলোকের মুখে মুখে যে কথাটা চলিয়া চলিয়া রটিতে থাকে, সেটা কাজেই মুখে মুখে বড় বাড়িয়া যায়। বিশেষ যেখানে একটুখানি বিস্ময়ের গন্ধ থাকে, সেখানে বড় বাড়িয়া যায়। জয়ন্তী সম্বন্ধে অতিপ্রকৃত রটনা পুৰ্ব্বে যথেষ্টই ছিল, নাগরিকদিগের কথাবাৰ্ত্তায় আমরা