পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

34ο সীতারাম তাই সীতারাম চিন্তাশূন্ত, অবিচলিত, কাৰ্য্যে অভ্রান্ত, প্রফুল্লচিত্ত, হাস্তবদন। সীতারাম ভৈরবীমুখে হরিনাম শুনিয়া, শ্ৰীহরি স্মরণ করিয়া আত্মজয়ী হইয়াছেন, এখন তার কাছে মুসলমান কোন ছার। র্তার প্রফুল্লকান্তি, এবং সামান্ত অথচ জয়শালিনী সেনা দেখিয়া মুসলমান সেনা 'মার! মার!' শব্দে গৰ্জিয়া উঠিল। স্ত্রীলোক দুই জনকে কেহ কিছু বলিল না—সকলেই পথ ছাড়িয়া দিল। কিন্তু সীতারাম ও তাহার সিপাহীগণকে চারি দিক হইতৃে আক্রমণ করিতে লাগিল। কিন্তু সীতারামের সৈনিকের তাহার আজ্ঞানুসারে, কোথাও তিলাৰ্দ্ধ দাড়াইয়া যুদ্ধ করিল। না—কেবল অগ্রবর্তী হইতে লাগিল। অনেকে মুসলমানের আঘাতে আহত হইল— অনেকে নিহত হইয়া ঘোড়া হইতে পড়িয়া গেল, অমনই আর এক জন পশ্চাৎ হইতে তাহার স্থান গ্রহণ করিতে লীল। এইরূপে সীতারামের সূচীবুল্লাহ অভয় থাকিয়া ক্রমশঃ মুসলমান সেনার মধ্যস্থল ভেদ করিয়া চলিল, সম্মুখে জয়ন্তী ও ঐ পথ করিয়া চলিল । সিপাহীদিগের উপর যে আক্রমণ হইতে লাগিল, তাহা ভয়ানক ; কিন্তু সীতারামের দৃষ্টাস্তে, উৎসাহবাক্যে, অধ্যবসায় এবং শিক্ষার প্রভাবে তাহারা সকল বিস্তু জয় করিয়া চলিল । পার্শ্বে দৃষ্টি না করিয়া, যে সম্মুখে,গতিরোধ করে, তাহাকেই আহত, নিহত, অশ্বচরণবিদলিত করিয়া সম্মুখে তাহারা অগ্রসর হইতে লাগিল । এই অদ্ভুত ব্যাপার দেখিয়া, মুসলমান সেনাপতি সীতারামের গতিরোধ জন্য একটা কামান সূচীৰূহের সম্মুখ দিকে পাঠাইলেন। ইতিপূর্বেই মুসলমানের দুর্গপ্রাচীর ভয় করিবার জন্য কামান সকল তদুপযুক্ত স্থানে পাতিয়াছিল, এজন্য স্বচাবুহের সম্মুখে হঠাৎ কামান আনিয়া উপস্থিত করিতে পারে নাই। এক্ষণে, রাজা রাণী পলাইতেছে জানিতে পারিয়া, বহু কষ্টে ও যত্নে একটা কামান তুলিয়া লইয়া, সেনাপতি স্বচীৰ্বাহের সম্মুখে পাঠাইলেন। নিজে সে দিকে যাইতে পারিলেন না ; কেন না, তুর্গদ্বার মুক্ত পাইয়া অধিকাংশ সৈন্ত লুঠের লোভে সেই দিকে যাইতেছে। সুতরাং তাহাকেও সেই দিকে যাইতে হইল— স্ববাদারের প্রাপ্য রাজভাণ্ডার পাঁচ জনে লুঠিয়া না আত্মসাৎ করে। কামান আসিয়া সীতারামের সূচীবুহের সম্মুখে পৌছিল। দেখিয়া, সীতারামের পক্ষের সকলে প্রমাদ গণিল । কিন্তু ঐ প্রমাদ গণিল না। শ্ৰী জয়ন্তী দুই জনে দ্রুতপদে অগ্রসর হইয়া কামানের সম্মুখে আসিল । শ্ৰী, জয়ন্তীর মুখ চাহিয়া হাসিয়া, কামানের মুখে আপনার বক্ষ স্থাপন করিয়া, চারি দিক্‌ চাহিয়া ঈষৎ, মূহ, প্রফুল্ল, জয়সূচক হাসি হাসিল। জয়ন্তীও শ্রীর মুখপানে চাহিয়, তার পর গোলন্দাজের মুখপানে চাহিয়া, সেইরূপ হাসি হাসিল—দুই জনে যেন