পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{& বেল গঙ্গরীম ও ফকিরের কথা দিয়া উপন্যাস আরম্ভ করা হইয়াছে। গ্রন্থশেষে “পাঠভেদ” অংশে কয়েকটি পরিত্যক্ত পরিচ্ছেদের সহিত প্রচারে প্রকাশিত উক্ত অংশ মিলাইয়া দেখিলেই দেখা যাইবে, বঙ্কিমচন্দ্র সীতারামকে দিয়া “হিন্দু-সাম্রাজ্য-স্থাপনে”র স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেই সেই স্বপ্ন ভাঙিয়া-চুরিয়া ছারখার হইয়াছে। এই কারণে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলির মধ্যে ট্র্যাজেডি হিসাবে ‘সীতারামই সৰ্ব্বাপেক্ষা শোচনীয় এবং ভয়াবহ। ‘সীতারাম উপন্যাসে হিন্দুধৰ্ম্ম অভু্যদয়ের সূচনা আছে, কিন্তু পরিণতি নাই। সূচনার মুখেই তাহ ধ্বংস হইয়াছে। ১২৯৩ বঙ্গাব্দে ১৭ই ফাল্গুন (মার্চ, ১৮৮৭ ) ‘সীতারাম প্রথম পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়, পৃষ্ঠা-সংখ্যা ছিল ৪১৯ । ইহা প্রচারেরই প্রায় পুনমুদ্রণ। ১২৯৫ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণে ( পৃ. ৩০০ ) বহুল পরিবর্তন সাধিত হয়, অনেকগুলি পরিচ্ছেদ ইহাতে পরিত্যক্ত হয়। তৃতীয় সংস্করণ বঙ্কিমচন্দ্রের জীবিতকালে মুদ্রিত হইলেও প্রকাশিত হইয়াছিল ১৩০১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে, তাহার মৃত্যুর কয়েক দিন পরে। বঙ্কিমচন্দ্রের শেষ তিনখানি উপন্যাস “ত্রয়ী” নামে খ্যাত। এই “ত্রয়ী” লইয়া অনেকে অনেক আলোচনা করিয়াছেন। বঙ্গবাণী মাসিক-পত্রিকায়, বিপিনচন্দ্র পাল ও নারায়ণে পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় এই উপন্যাসগুলির মূল তত্ত্ব লইয়া ব্যাখ্যা করিয়াছেন। বঙ্কিমচন্দ্রের জীবনীকারেরাও সংক্ষেপে এই “ত্রয়ী”-কথা বিবৃত করিয়াছেন। ১৮৯৭ খ্ৰীষ্টাব্দে গিরিজাপ্রসন্ন রায় চৌধুরী-প্রণীত বঙ্কিমচন্দ্র পুস্তকের তৃতীয় ভাগ প্রকাশিত হয়। ইহাতে ‘সীতারামের নানা চরিত্র লইয়া বিস্তৃত আলোচনা আছে। ১৩২২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যা “নারায়ণ’ পত্রিকায় প্রকাশিত পাচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের “বঙ্কিমচন্দ্রের ত্রয়ী” প্রবন্ধ উল্লেখযোগ্য। আমরা দেবী চৌধুরাণী’র ভূমিকায় এই প্রবন্ধের অংশবিশেষ উস্কৃত করিয়াছি। বিশেষভাবে সীতারাম সম্বন্ধে তাহার বক্তব্য নিয়ে উদ্ধৃত হইল – সীতারাম উপন্যাসে যেন দেবীচৌধুরাণীর obverse proposition solve বা কতকটা বিরোধী ভাবের ব্যঞ্জনা দেখান হইয়াছে। এখানে পুরুষ প্রকট ; সীতারাম রায় কৰ্ম্মী ও তেজস্বী পুরুষ। তাহার তিন স্ত্রী—শ্ৰী, নন্দ এবং রমা। শ্ৰী যেন ঐশ্বৰ্য্য, নন্দ যেন হলাদিনী, রমা যেন স্ত্রী বা মোদিনী। রাজার রাণী যেমন হইতে হয়, ঘরণী-গৃহিণী যেমন হইতে হয়, নন্দ তেমনই। রমা যেন মোমের পুতুল, সোহাগের খুচি, যেন আদিরসের মঞ্জুষা ; কিন্তু ঐ— সে কেমন নারী !...শ্ৰী একটা প্রহেলিকা ; সন্ন্যাসিনী ভৈরবী বটে, কিন্তু জগন্নাথের রথের দড়ীর টানের মত তাহার হৃদয়ে স্বামী-ঘর করিবার সাধটুকু বেশ জাগিতেছে। অথচ যখন সীতারাম তাহার দ্বারস্থ, তাহার জন্য পাগল, সে পাগলামীর ফলে রাজ্য যায়, স্বাধীনতা যায়, তখন ঐ