পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 এই পর্য্যন্ত শুনে আমার শ্রোতা পুপেদিদি খুব হেসে উঠল। তাকে কেউ ভয় করে এতে সে ভারি খুসি। যেমন খুসি হয় জগতের দোর্দ্দণ্ড প্রতাপের দল।

 দয়াময়ী আশ্বাস দিয়ে বললে, ভয় নেই, আমি তাকে কিছু বলব না।

 আমি বললুম, তোমাকে ভয় কে না করে। দুবেলা দু বাটি ক’রে দুধ খাও—গায়ে কী রকম জোর! মনে আছে তো তোমার হাতে লাঠি দেখে সেই বাঘট ল্যাজ গুটিয়ে একেবারে নুটুপিসির বিছানার নিচে গিয়ে লুকিয়েছিল।

 বীরাঙ্গনা ভারি খুসি। মনে করিয়ে দিলে ভালুকটার কথা—সে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল নাবার ঘরের স্নানের জলের টবের মধ্যে।

 সেই যে মানুষটার ইতিহাস গড়ে উঠেছিল আমার একলার হাতে এখন থেকে পুপেও তাতে যেখানে সেখানে জোড়া দিতে লাগল। আমি যদি বা বলি, একদিন বেলা তিনটার সময় সে এসেছিল আমার কাছে দাড়ি কামাবার ক্ষুর চেয়ে নিতে, আর নিতে খালি-বিস্কুটের টিন, পুপে খবর দেয় সে ওর কাছ থেকে নিয়ে গেছে পশম বোনবার কুরুস্‌কাটি।

 সব গল্পেরই একটা আরম্ভ আছে, শেষ আছে, কিন্তু ঐ যে “এক যে আছে মানুষ” তার আর শেষ নেই। তার দিদির জ্বর হয়, ডাক্তার ডাকতে যায়। টমি কুকুর আছে, বেড়ালের নখের আঁচড় লেগে তার নাক যায় ছ’ড়ে। পিছন দিক থেকে গোরুর গাড়ির উপর চ'ড়ে বসেছিল, তাই নিয়ে গাড়োয়ানের সঙ্গে হয় বিষম বচসা। উঠোনে কলতলায় পিছলে প’ড়ে বামুন ঠাকুরুণের মাটির ঘড়া দেয় ভেঙে। মোহনবাগানের ফুটবল্ ম্যাচ্‌ দেখতে গিয়েছিল, পকেট থেকে সাড়ে তিনআনা পয়সা কে নেয় তুলে। ফির্‌তি রাস্তায় ভীমনাগের দোকান থেকে সন্দেশ কেনা বাদ গেল। বন্ধু আছে কিনু চৌধুরী, তার ওখানে গিয়ে কুচো চিংড়ি ভাজা আর আলুর দম ফরমাস করে। এমনি

8