পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বরুণ দেবের ঘরণী কেন।

 তিনি যে জলদেবী। নারী জাতটা বিশুদ্ধ জলীয়, তার কাঠিন্য নেই, চাঞ্চল্য আছে, চঞ্চল করেও। ভূ-ব্যবস্থার গোড়াতেই জলরাশি। সেই জলে পানকৌড়ির পিঠে চ’ড়ে যত সব নারী ভেসে বেড়াতে লাগল সারিগান গাইতে গাইতে।

 অতি চমৎকার। কিন্তু তখন পানকৌড়ির সৃষ্টি হয়েছে না কি।

 হয়েছে বৈ কি। পাখীদের গলাতেই প্রথম সুর বাঁধা চলছিল। দুর্বলতার সঙ্গেই মাধুর্যের অনবচ্ছিন্ন যোগ, এই তত্ত্বটির প্রথম পরীক্ষা হোলো ঐ দুৰ্বল জীবগুলির ডানায় এবং কণ্ঠে। একটা কথা বলি রাগ করবে না তো।

 না রাগতে চেষ্টা করব।

 যুগান্তরে পিতামহ যখন মানবসমাজে দুর্বলতাকেই মহিমান্বিত করবার কাজে কবিসৃষ্টি করেছিলেন তখন সেই সৃষ্টির ছাঁচ পেয়েছিলেন এই পাখীর থেকেই। সেদিন একটা সাহিত্যসম্মিলন গোছের ব্যাপার হোলো তাঁর সভামণ্ডপে, সভাপতিরূপে কবিদের আহ্বান ক’রে বলে দিলেন, তোমরা মনে মনে উড়তে থাকো শূন্যে, আর ছন্দে ছন্দে গান করে বিনাকারণে, যা-কিছু কঠিন তা তরল হয়ে যাক্, যা-কিছু বলিষ্ঠ তা এলিয়ে পড়ে যাক্ আর্দ্র হয়ে। কবিসম্রাট, আজ পর্য্যন্ত তুমি তার কথা রক্ষা করে চলেছ।

 চলতেই হবে যতদিন না ছাঁচ বদল হয়।

 আধুনিক যুগ শুকিয়ে শক্ত হয়ে আসছে, মোমের ছাঁচ আর মিলবেই না। এখন সে দিন নেই যখন নারীদেবতার জলের বাসাটি দোল খেত পদ্মে, যখন মনোহর দুর্বলতায় পৃথিবী ছিল অতলে নিমগ্ন।

 সৃষ্টি ঐ মোলায়েমের ছন্দে এসেই থামল না কেন।

 গোটা কয়েক যুগ যেতে না যেতেই ধরণীদেবী আর্ত্তবাক্যে আবেদনপত্র

১১৪