পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পাঠালেন চতুম্মুর্খের দরবারে। বললেন, ললনাদের এই লকার-বহুল লালিত্য। আর তত সহ্য হয় না। স্বয়ং নারীরাই করুণকল্লোলে ঘোষণা করতে লাগল— ভালো লাগছে না। উৰ্দ্ধলোক থেকে প্রশ্ন এল, কী ভালো লাগছে না। সুকুমারীরা বললে, বলতে পারিনে।—কী চাই।—কী চাই তারও সন্ধান পাচ্চিনে।

 ওদের মধ্যে পাড়াকুঁদুলিরও কি অভিব্যক্তি হয়নি—আগাগোড়াই কি সুবচনীর পালা।

কোঁদলের উপযুক্ত উপলক্ষ্যটি না থাকাতেই বাক্যবাণের টঙ্কার নিমগ্ন রইল অতলে, ঝাঁটার কাঠির অঙ্কুর স্থান পেল না অকূলে।

 এত বড়ো দুঃখের সংবাদে চতুর্মুখ লজ্জিত হলেন বোধ করি।

 লজ্জা ব’লে লজ্জা। চারমুণ্ড হেঁট হয়ে গেল। স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলেন রাজহংসের কোটি যোজন-জোড়া ডানাদুটোর পরে, পূরো একটা ব্রহ্মযুগ। এদিকে আদিকালের লোকবিশ্রত সাধ্বী পরম পানকৌড়িনী— শুভ্রতায় যিনি ব্রহ্মার পরম হংসের সঙ্গে পাল্লা দেবার সাধনায় হাজারবার ক’রে জলে ডুব দিয়ে দিয়ে চঞ্চঘর্ষণে পালকগুলোকে ডাটাসার ক’রে ফেলছিলেন—তিনি পর্যন্ত ব’লে উঠলেন, নির্মলতাই যেখানে নিরতিশয়, সেখানে শুচিতার সর্বপ্রধান সুখটাই বাদ পড়ে, যথা, পরকে খোটা দেওয়া; শুদ্ধসত্ব হবার মজাটাই থাকে না। প্রার্থনা করলেন, হে দেব মলিনতা চাই, ভূরিপরিমাণে, অনতিবিলম্বে এবং প্রবলবেগে। বিধি তখন অস্থির হয়ে লাফিয়ে উঠে বললেন, ভুল হয়েছে, সংশোধন করতে হবে। —বাসরে কী গলা। মনে হোলো মহাদেবের মহাবৃষভটার ঘাড়ে এসে পড়েছে মহাদেবীর মহাসিংহটা —অতিলৌকিক সিংহনাদে আর বৃষগর্জ্জনে মিলে দ্যুলোকের নীলমণিমণ্ডিত ভিটাতে দিলে ফাটল ধরিয়ে। মজার আশায় বিষ্ণুলোক থেকে ছুটে বেরিয়ে এলেন নারদ। তার ঢেঁকির পিঠ থাবড়িয়ে বললেন,

১১৫