পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 মানি বই কি।

 এতকাল পরে বিধাতার পৌরুষ প্রকাশ পেল ডাঙায়—পুরুষের স্বাক্ষর পড়ল সৃষ্টির শক্তজমিতে। গোড়াতেই কী বীভৎস পালোয়ানি। কখনো আগুনে পোড়ানো, কখনো বরফে জমানো, কখনো ভূমিকম্পের জবরদস্তির যোগে মাটিকে হাঁ করিয়ে কবিরাজী বড়ির মতো পাহাড়গুলোকে গিলিয়ে খাওয়ানো—এর মধ্যে মেয়েলি কিছু নেই সে কথা মানে কি না।

 মানি বই কি।

 জলে ওঠে কলধ্বনি, হাওয়ায় বাঁশি বাজে সোঁ সোঁ—কিন্তু বিচলিত ডাঙা যখন ডাক পাড়তে থাকে তখন ভরতের সঙ্গীতশাস্ত্রটাকে পিণ্ডি পাকিয়ে দেয়। তোমার মুখ দেখে বোধ হচ্চে কথাটা ভালো লাগছে না। কী ভাবছ ব’লেই ফেলল না।

 আমি ভাবছি আর্টমাত্রেরই একটা পুরগিত বনেদ আছে যাকে বলে ট্র্যাডিশন। তোমার বেসুর ধ্বনির আর্টকে বনেদি ব’লে প্রমাণ করতে পারে কি।

 খুব পারি। তোমাদের সুরের মূল ট্র্যাডিশন মেয়ে-দেবতার বাদ্যযন্ত্রে। যদি বেসুরের উদ্ভব খুঁজতে চাও তবে সীধে চলে যাও পৌরাণিক মেয়েমহল পেরিয়ে পুরুষদেবতা জটাধারীর দরজায়। কৈলাসে বীণাযন্ত্র বে-আইনী, উর্ব্বশী। সেখানে নাচের বায়না নেয়নি। যিনি সেখানে ভীষণ বেতালে তাণ্ডব নৃত্য করেন তার নন্দীভৃঙ্গী ফুঁকতে থাকে শিঙে, তিনি বাজান ববম্বম গালবাদ্য, আর কড়াকড় কড়াকড় ডমরু। ধ্বসে পড়তে থাকে কৈলাসের পিণ্ড পিণ্ড পাথর। মহাবেসুরের আদি উৎপত্তিটা স্পষ্ট হয়েছে তো।

 হয়েছে।

 মনে রেখো সুরের হার বেসুরের জিত এই নিয়েই পালা রচনা হয়েছে পুরাণে দক্ষযজ্ঞের। একদা যজ্ঞসভায় জমা হয়েছিলেন দেবতারা, দুইকানে কুণ্ডল, দুই বাহুতে অঙ্গদ, গলায় মণিমাল্য। কী বাহার। ঋষিমুনিদের দেহ

১১৭