আজো তাঁর মুখখানা স্পষ্ট মনে পড়ে। ক্লাসে বসতেন যেন আলগোছে, বইগুলো ছিল কণ্ঠস্থ। উপরের দিকে তাকিয়ে পাঠ ব'লে যেতেন, কথাগুলো যেন সদ্য ঝরে পড়ছে আকাশ থেকে। আমরা ক্লাসে উপস্থিত থাকব, মন দিয়ে পড়া শুনব, সে গরজটা সম্পূর্ণ আমাদেরই ব'লে তিনি মনে করতেন।
তিনি তোমাদের মুখ চেনবার সুযোগ পাননি বোধ হয়।
চেষ্টাও করেননি। একদিন ছুটির দরবার নিয়ে তাঁর ঘরে ঢুকতেই তিনি শশব্যস্ত হয়ে চৌকি ছেড়ে উঠে পড়লেন, মনে করলেন আমি বুঝি যাকে বলে একজন রীতিমতো মহিলা।
অমনতরো অভাবনীয় ভুল করা তাঁর অভ্যস্ত ছিল।
ছিল বই কি। তোমার দাড়ি দেখে কোনোদিন তোমাকে নবাব খাঞ্জেখাঁর প্রাইভেট সেক্রেটারি ব'লে ভুল করেন নি তো। না ঠাট্টা নয়, তিনি তো তোমার বন্ধু ছিলেন, বলো না তাঁর কথা।
তাঁর শত্রু কেউ ছিল না, কিন্তু সমজদার বন্ধু ছিলুম একলা আমি। লোকে যখন তাঁর ক্ষ্যাপামির কথা রটাত তিনি আশ্চর্য্য হয়ে যেতেন। একদিন আমাকে এসে বললেন, সবাই বলছে আমি ক্লাস পড়াই কিন্তু ক্লাসের দিকে তাকাইনে।
আমি বললুম, তোমার সাঙাৎরা তোমার বিদ্যের দোষ ধরতে পারে না তোমার বুদ্ধির দোষ ধরে। তারা বলে, তোমার পড়ানোর ভুল হয় না কিন্তু পড়াচ্চ যে সেইটেই ভুলে যাও।
পড়াচ্চি যদি না ভুলি তবে পড়াতে পারতুম না, নিছক মাষ্টারিই করে যেতুম। পড়ানোটা নিঃশেষে হজম হয়ে গেছে, ওটা নিয়ে মনটা আইঢাই করে না।
জলচর জলে সাঁতার দিলে টের পাওয়া যায় না, স্থলচর দিলে সেটা খুবই মালুম হয়। তুমি অধ্যাপন সরোবরের গভীর জলের মাছ।