পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 আমি যদি ছাত্রদের দিকেই তাকাই তবে ক্লাসের দিকে মন দেব কী ক'রে।

 তোমার সেই ক্লাসটা আছে কোথায়।

 কোথাও না, সেইজন্যেই তো বাধা পাইনে। ছাত্ররাই যদি আমার চোখ জুড়ে বসে তাহোলে ক্লাসের আত্মাপুরুষটা আড়ালে পড়ে যে।

 “পড়ো বাবা আত্মারাম”—এই বুঝি তোমার বুলি।

 পড়াচ্চি কই। তমার আত্মািরামকেই টহল দেওয়াচ্চি।

 তোমার প্রণালীটা কী রকম।

 গঙ্গাধারার বহে যাবার প্রণালী যে রকম। ডাইনে বাঁয়ে কোথাও মরু, কোথাও ফসল, কোথাও শ্মশান, কোথাও সহর। এই নিয়ে গঙ্গামায়ীকে পদে পদে বিচার করতে যদি হোত তাহোলে আজ পর্য্যন্ত সগরসন্তানদের উদ্ধার হোত না। যাদের যতটা হবার তাই হয়, বিধাতার সঙ্গে টক্কর দিয়ে তার চেয়ে বেশি হওয়াতে গেলেই চলা বন্ধ। আমার পড়ানো চলে মেঘের মতো শূন্য দিয়ে, বর্ষণ হয় নানা ক্ষেতে, ফসল ফলে ক্ষেত অনুসারে। অসম্ভবকে নিয়ে ঠেলাঠেলি ক'রে সময় নষ্ট করিনে বলে হেডমাষ্টার হন ক্ষাপা। ঐ হেডমাষ্টারটিকেও অত্যন্ত সত্য ব'লে গণ্য করলে অত্যন্ত ভুল করা হয়।

 পুপু বললে, ছাত্রীদের অনেকে মনে মনে খুঁৎখুঁৎ করত। তাদের লক্ষ্য করে একদিন বলেছিলেন, এখানে যে মাষ্টারটা আছে তাকে নেই ক"রে দিয়েছি, তোমাদের নিজের মনকেই বেড়ে ওঠবার জায়গা করে দেবার জন্যেই। আর একদিন তিনি বলেছিলেন, মাষ্টারিতে আমি হচ্চি ক্লাসিক, আর সিধুবাবু রোমাণ্টিক। বলা বাহুল্য মাষ্টারমশায়ের কথাটা আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি।

 মানে হচ্ছে, মাষ্টার সমগ্র ক্লাসকেই দিতেন উপরে তুলে, আর সিধু ছাত্রদের একে একে নিজের কাঁধে চড়িয়ে গর্ত্তগাড়ি পার করত। বুঝেছ।

১২৭