পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

নখের জোর, চার পা এসে ঠেকল দুটিমাত্র পায়ে। বোঝা গেল বিধাতা তাঁর হাতিয়ার চালাচ্চেন সৃষ্টির যুগটাকে ক্রমশঃ সূক্ষ্ম ক’রে আনবার জন্যে। স্থূলে সূক্ষে জড়িয়ে আছে মানুষ। মনের সঙ্গে মাংসের চলেছে ঠেলাঠেলি মারামারি। বিধাতা পুনশ্চ মাথা নাড়ছেন, উহু হোলো না। লক্ষণ দেখা যাচ্চে এটাও টিকবে না, এ আপনিই আপনাকে নিকেশ করে দেবে আশ্চর্য্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে। যাবে কয়েক লক্ষ বছর কেটে। মাংস পড়বে ঝরে, মন উঠবে একেশ্বর হয়ে। সেই বিশুদ্ধ মনের যুগে তোমার মাষ্টারমশায় বসেছেন শরীররিক্ত ক্লাসে। মনে করে দেখে তার শিক্ষা দেবার প্রণালী হচ্চে ছাত্রদের মধ্যে নিজেকে মেলাতে থাকা, মনের উপর মন বিছিয়ে; বাইরের বাধা নেই বললেই হয়।

 স্থলবুদ্ধির বাধাও নেই।

 সেটা না থাকলে বুদ্ধি মাত্রই হয়ে পড়ে বেকার। ভালোমন্দ বোকা বুদ্ধিমানের ভেদ আছেই। চরিত্র আছে নানারকমের। ভাবের বৈচিত্র্য আছে, ইচ্ছার স্বাতন্ত্র আছে। এখন তিনিই ভালো মাষ্টার যিনি সেই অনেকের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেন, শিক্ষা এখন অন্তরে অন্তরে।

 দাদামশায়, ইস্কুলটা কোথায় আছে সেটা ঠিক মনে আনতে পারছিনে।

 পৃথিবীতে তিনটে বাস আছে—এক সমুদ্রতলে, আর এক ভূতলে, আর আছে আকাশে, যেখানে সূক্ষ্ম হাওয়া আর সূক্ষ্মতর আলো। এইখানটা আজ আছে খালি আগামী যুগের জন্যে।

 তাহোলে তোমার ক্লাস চলেছে সেই হাওয়ায় সেই আলোয়। কিন্তু ছাত্রদের চেহারাটা কী রকম।

 বুঝিয়ে বলা শক্ত, তাদের আকার নিশ্চয়ই আছে কিন্তু আকারের আধার নেই।

 তাহোলে বোধ হচ্ছে নানা রঙের আলোয় তা’রা গড়া।

১৩৪