পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 ঐ দেখো সত্যযুগের মহিমাটা মনে ধারণা করতে পারছ না। সত্যযুগের পুপে আপনার সীমানা বাড়িয়ে দিত বেড়ালের মধ্যে। সীমানা লোপ করত না। তুমি তুমিও থাকতে বেড়ালও হোতে।

 তোমার এসব কথার কোনো মানে নেই।

 সত্যযুগের ভাষায় মানে আছে। সেদিন তো তোমাদের অধ্যাপক প্রমথবাবুর কাছে শুনেছিলে, আলোকের অণুপরমাণু বৃষ্টির মতো কণা বর্ষণও বটে আবার নদীর মতো তরঙ্গধারাও বটে। আমাদের সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝি, হয় এটা নয় ওটা, কিন্তু বিজ্ঞানের বুদ্ধিতে একই কালে দুটোকেই মেনে নেয়। তেমনি একই কালে তুমি পুপুও বটে বেড়ালও বটে, এটা সত্যযুগের কথা।

 দাদামশায় যতই তোমার বয়স এগিয়ে চলছে ততই তোমার কথাগুলো অবোধ্য হয়ে উঠছে তোমার কবিতারই মতো।

 অবশেষে সম্পূর্ণ নীরব হয়ে যাব তারই পূর্ব্বলক্ষণ।

 সেদিনকার কথাটা কি ঐ কাবুলি-বেড়ালের পরে আর এগোল না।

 এগিয়েছিল। সুকুমার এককোণে বসে ছিল, সে স্বপ্নে-কথা-বলার মতো ব’লে উঠল, আমার ইচ্ছে করে শাল গাছ হয়ে দেখতে। সুকুমারকে উপহসিত করবার সুযোগ পেলে তুমি খুসি হোতে। ও শাল গাছ হোতে চায় শুনে তুমি তো হেসে অস্থির। ও চমকে উঠল লজ্জায়। কাজেই ও বেচারীর পক্ষ নিয়ে আমি বললেম—দক্ষিণের হাওয়া দিল কোথা থেকে, গাছটার ডাল ছেয়ে গেল ফুলে, ওর মজ্জার ভিতর দিয়ে কী মায়ামন্ত্রের অদৃশ্য প্রবাহ বয়ে যায় যাতে ঐ রূপের গন্ধের ভোজবাজি চলতে থাকে। ভিতরের থেকে সেই আবেগটা জানতে ইচ্ছা করে বৈ কী, গাছ না হোতে পারলে বসন্তে গাছের সেই অপরিমিত রোমাঞ্চ অনুভব করব কী ক’রে।—

 আমার কথা শুনে সুকুমার উৎসাহিত হয়ে উঠল,—বললে, আমার

১৪০