পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শোবার ঘরের জানলা থেকে যে শালগাছটা দেখা যায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে তার মাথাটা আমি দেখতে পাই, মনে হয় ও স্বপ্ন দেখছে।—

 শালগাছ স্বপ্ন দেখছে শুনে বোধ হয় বলতে যাচ্ছিলে, কী বোকার মতো কথা।—বাধা দিয়ে ব’লে উঠলুম, শালগাছের সমস্ত জীবনটাই স্বপ্ন। ও স্বপ্নে চলে এসেছে বীজের থেকে অঙ্কুরে, অঙ্কুর থেকে গাছে। পাতাগুলোই তো ওর স্বপ্নে-কওয়া-কথা।

 সুকুমারকে বললুম, সেদিন যখন সকালবেলায় ঘন মেঘ ক’রে বৃষ্টি হচ্ছিল, আমি দেখলুম তুমি উত্তরের বারান্দায় রেলিং ধ’রে চুপ ক’রে দাঁড়িয়েছিলে। কী ভাবছিলে বলো দেখি।

 সুকুমার বললে, জানিনে তো কী ভাবছিলুম।

 আমি বললুম, সেই না-জানা-ভাবনায় ভরে গিয়েছিল তোমার সমস্ত মন মেঘেভরা আকাশের মতো। সেই রকম গাছগুলো যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওদের মধ্যে যেন একটা না-জানা ভাব আছে। সেই ভাবনাই বর্ষায় মেঘের ছায়ায় নিবিড় হয়, শীতের সকালের রোদ্রে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেই না-জানা ভাবনার ভাষায় কচি পাতায় ওদের ডালে ডালে বকুনি জাগে, গান ওঠে ফুলের মঞ্জুরীতে। আজো মনে পড়ে সুকুমারের চোখ দুটো কী রকম এতখানি হয়ে উঠল; সে বললে, আমি যদি গাছ হোতে পারতুম তাহোলে সেই বকুনি সির্সির্ করে আমার সমস্ত গা বেয়ে উঠত আকাশের মেঘের দিকে। তুমি দেখলে সুকুমার আসরটা দখল ক’রে নিচ্চে। ওকে নেপথ্যে সরিয়ে তুমি এলে সামনে। কথা পাড়লে, আচ্ছা দাদামশায়, এখন যদি সত্য যুগ আসে তুমি কী হোতে চাও। তোমার বিশ্বাস ছিল আমি ম্যাসটোডন কিম্বা মেগাথেরিয়ম হোতে চাইব, কেননা জীব-ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের প্রাণীদের সম্বন্ধে তোমার সঙ্গে এর কিছুদিন আগেই আলোচনা করেছি। তখন তরুণ পৃথিবীর হাড় ছিল কঁআচা, পাকা রকম ক’রে জমাট হয়ে ওঠেনি তার

১৪২