কাছ থেকে; নিস্তব্ধ রাস্ত বেয়ে গেল চলে ডাক্তারের গাড়ি তার ঘরে ফিরে। সেদিন তামার সমস্ত মন-ভরা একটি রাত্রির রূপ দেখেছি, আমি তাতে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলুম, পৃথিবী যেমন তার স্বাতন্ত্রা মিলিয়ে দেয় নিশীথের ধ্যানাবরণে।
—কী জানি, সুকুমারের কী মনে হোলো সে অধীর হয়ে ব’লে উঠল, আমাকে কিন্তু তোমার ঐ দিদি অন্ধকারের ভিতর দিয়ে অমন চুপি চুপি নিয়ে যাবে না। পূজোর ছুটির দিনে যেদিন সকালে দশটা বাজবে, কাউকে ইস্কুলে যেতে হবে না, ছেলেরা সবাই যেদিন গেছে রথতলার মাঠে ব্যাটবল খেলতে, সেইদিন আমি খেলার মতে ক’রেই হঠাৎ মিলিয়ে যাব তাকাশে, ছুটির দিনের রোদ্দুরে।—শুনে আমি চুপ করে রইলুম, কিছু বললুম না।
পুপেদিদি বললে, কাল থেকে সুকুমারদা’র কথা তুমি প্রায়ই বলছ। তার মধ্যে আমার উপরে একটুখানি খোঁচা থাকে। তুমি কি মনে করো তোমার ভালোবাসার অংশ নিয়ে সুকুমারদা’র সঙ্গে আমার ছেলেবেলাকার যে ঝগড়া ছিল সেটা এখনো আছে।
হয়তো একটুখানি আছে বা। সেইটেকে একেবারে ক্ষইয়ে দেব ব’লেই বারবার তার কথা তুলি। আরো একটুখানি কারণ আছে।
কী কারণ বলোই না।
কিছুদিন আগে সুকুমারের বাবা ডাক্তার নিতাই এসেছিলেন আমার কাছে বিদায় নিতে।
কেন, বিদায় নিতে কেন।
তোমাকে বলব মনে করেছিলুম বলা হয়নি। আজ বলি। নিতাই চাইলে সুকুমার আইন পড়ে, সুকুমার চাইলে সে ছবি আঁকা শেখে নন্দলালবারুর কাছে। নিতাই বললে, ছবি আঁকা বিদ্যেয় আঙুল চলে পেট চলে না।