পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সুকুমার বললে আমার ছবির ক্ষিদে যত, পেটের ক্ষিদে তত বেশি নয়। নিতাই কিছু কড়া ক’রে বললে, সে কথাটা তোমার প্রমাণ ক’রে দেবার দরকার হয়নি, পেট সহজেই চলে যাচ্চে। কথাটা বিশ্রী লাগল তার মনে—কিন্তু হেসে বললে, কথাটা সত্যি, এর প্রমাণ দেওয়া উচিত। —বাবা ভাবলে এইবার ছেলে আইন পড়তে বসবে। সুকুমারের বরিশালের মাতামহ ক্ষ্যাপা গোছের মানুষ, সুকুমাবের স্বভাবটা তাঁরই ছাঁচের, চেহারারও সাদৃশ্য আছে। দুজনের পরে দুজনের ভালোবাসা পরম বন্ধুর মতো। পরামর্শ হোলো দুজনে মিলে— সুকুমার টাকা পেল কিছু, কখন চলে গেল বিলেতে কেউ জানে না। বাবাকে চিঠি লিখে গেল, আপনি চান না আমি ছবি আঁকা শিখি, শিখব না। আপনি চান অর্থকরী বিদ্যা আয়ত্ত করব, তাই করতে চললুম। যখন সমাপ্ত হবে প্রণাম করতে আসব, আশীর্ব্বাদ করবেন।

 কোন্ বিদ্যে শিখতে গেল কাউকে বলে নি। একটা ডায়ারি পাওয়া গেল তার ডেস্কে। তার থেকে বোঝা গেল সে য়ুরোপে গেছে উড়ও জাহাজের মাঝিগিরি শিখতে। তার শেষদিকটা কপি ক’রে এনেছি। ও লিখছে— মনে আছে একদিন আমার ছত্রপতি পক্ষীরাজে চ’ড়ে পুপুদিদিকে চন্দ্রলোক থেকে উদ্ধার করতে যাত্রা করেছিলুম আমাদের ছাদের একধার থেকে আর এক ধারে। এবার চলেছি কলের পক্ষীরাজকে বাগ মানাতে। য়ুরোপে চন্দ্রলোকে যাবার আয়োজন চলেছে। যদি সুবিধা পাই যাত্রীর দলে আমিও নাম লেখাব। আপাতত পৃথিবীর আকাশ-প্রদক্ষিণে হাত পাকিয়ে নিতে চাই। একদিন আমি তার দাদামশায়ের দেখাদেখি যে ছবি এঁকেছিলুম, দেখে পুপুদিদি হেসেছিল। সেইদিন থেকে দশ বছর ধরে ছবি আঁকা অভ্যাস করেছি কাউকে দেখাইনি। এখনকার তাঁকা দুখানা ছবি রেখে গেলুম পুপের দাদামশায়ের জন্যে। একটা ছবি জলস্থল আকাশের একতান সঙ্গৎ নিয়ে, আর একটা আমার বরিশালের দাদামশায়ের। পুপের দাদামশায় ছবি দুটো দেখিয়ে

১৪৭