পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

অম্লানমুখে বলতে পারে যে, কাঁচড়াপাড়ার কুম্ভমেলায় গঙ্গাস্নান করতে গিয়ে কুমীরে ধরেছিল তার টিকির ডগা। সেটা গেল তলিয়ে, বোঁটা-ছেঁড়া মানবদেহের বাকি অংশটুকু উঠে এসেছে ডাঙায়। আরও একটু চোখ টিপে দিলে সে নির্লজ্জ হয়ে বলতে পারে, মানোয়ারী জাহাজের ডুবুরি গোরা সাতমাস পাঁক ঘেঁটে গোটা পাঁচ ছয় চুল ছাড়া বাকি টিকিটা উদ্ধার করে এনেছে, বকশিষ পেয়েছে এককালীন সোয়া তিনটাকা। পুপুদিদি তবু যদি বলে, তারপরে, তাহোলে তখনি সুরু করবে, নীলরতন ডাক্তারের পায়ে ধরে বললে, দোহাই ডাক্তারবাবু, ওষুধ দিয়ে টিকিটা জোড়া দিয়ে লাগিয়ে দাও, নইলে তেলোর কাছে প্রসাদী ফুল বাঁধতে পারছিনে। তিনি সন্ন্যাসীদত্ত বজ্রজটী মলম লাগিয়ে দিতেই টিকিটা একেবারে মরিয়া হয়ে বেড়ে চলেছে, অফুরান একটা কেঁচোর মতো। পাগড়ি পরলে পাগড়িটা বেলুনের মতো ফেঁপে উঠতে থাকে, মাথার বালিশটার উপর চূড়ো তৈরি হোতে থাকে দৈত্যপুরীর ব্যাঙের ছাতার মতো। বাঁধা মাইনে দিয়ে নাপিত রাখতে হোলো। প্রহরে প্রহরে তাকে দিয়ে ব্রহ্মতালু চাঁচিয়ে নিতে হচ্চে।

 তবু যদি শ্রোতার কৌতুহল না মেটে তাহোলে সে করুণ মুখ ক’রে বলতে থাকে যে, মেডিক্যাল কলেজের সার্জন জেনেরাল হাতের আস্তিন গুটিয়ে বসেছিল, তার ভীষণ জেদ মাথার ঐ জায়গাটাতে ইস্ক্রুপ দিয়ে ফুটে। ক’রে সেইখানে রবারের ছিপি এঁটে গালা লাগিয়ে সিলমোহর ক’রে দেবে, ইহকাল পরকালে ওখান দিয়ে আর টিকি গজাতে পারবে না। চিকিৎসাটা ইহকাল ডিঙিয়ে পরকালেই গিয়ে ঠেকবে এই আশঙ্কায় ও কোনোমতেই রাজি হোলো না।

 আমাদের এই “সে” পদার্থটি ক্ষণজন্মা বটে; এমনতরে। কোটিকে গোটিক মেলে। মিথ্যে কথা বানাতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিভা। আমার আজগবি গল্পের এতবড়ো উত্তরসাধক ওস্তাদ বহুভাগ্যে জুটেছে। গল্প-প্রশ্নের উত্তরপাড়ার