পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 জিজ্ঞাসা করলুম, বৎস, তোমাকে জ্ঞাতিরা কী নামে ডাকে? শেয়াল বল্‌লে, “হৌ-হৌ”।

 আমরা বললুম, ছি ছি, এ তো চলবে না। মানুষ হোতে চাও তো প্রথমে নাম বদলাতে হবে, তার পরে রূপ। আজ থেকে তোমার নাম হোলো শিবুরাম।

 সে বললে, আচ্ছা। কিন্তু মুখ দেখে বোঝা গেল, হৌ-হৌ নামটা তার যে-রকম মিষ্টি লাগে শিবুরাম তেমন লাগল না। উপায় নেই, মানুষ হোতেই হবে।

 প্রথম কাজ হোলো তাকে দু’পায়ে দাঁড় করানো। অনেক দিন লাগল। বহুকষ্টে নড়বড় করতে করতে চলে, থেকে থেকে পড়ে পড়ে যায়। ছ-মাস গেল দেহটাকে কোনো মতে খাড়া রাখতে। থাবাগুলো ঢাকবার জন্য পরানো হোলো জুতো মোজা দস্তান।

 অবশেষে আমাদের সভাপতি গৌর গোঁসাই বললেন, শিবুরাম, এইবার আয়নায় তোমার দ্বিপদী ছন্দের মূর্ত্তিটা দেখো দেখি, পছন্দ হয় কিনা।

 আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ফিরে ঘাড় বেঁকিয়ে, শিবুরাম অনেকক্ষণ ধরে দেখলে। শেষকালে বল্‌লে, গোঁসাইজি এখনো তোমার সঙ্গে তো চেহারার মিল হচ্চে না।

 গোঁসাইজি বললেন, শিবু, সোজা হোলেই কি হোলো? মানুষ হওয়া এত সোজা নয়, বলি ল্যাজটা যাবে কোথায়, ওটার মায়া কি ত্যাগ করতে পারো?

 শিবুরামের মুখ গেল শুকিয়ে। শেয়ালপাড়ায় দশবিশ গাঁয়ের মধ্যে ওর ল্যাজ ছিল বিখ্যাত।

 সাধারণ শেয়ালরা ওর নাম দিয়েছিল, “খাসা-লেজুড়ি”। যারা শেয়ালি-সংস্কৃত জানত তারা সেই ভাষায় ওকে বলত, “সুলোমলাঙ্গুলী”। দুদিন

১৬