গেল ওর ভাবতে, তিনরাত্রি ওর ঘুম হোলো না। শেষকালে বৃহস্পতিবারে এসে বললে, রাজি।
পাট্কিলে রঙের ঝাঁকড়া রোঁয়াওয়ালা ল্যাজটা গেল কাটা, একেবারে গোড়া ঘেঁষে।
সভ্যেরা সকলে বলে উঠল, আহে, পশুর এ কী মুক্তি! ল্যাজবন্ধনের মায়া ওর এতদিনে কেটে গেল! ধন্য!
শিবুরাম একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে। চোখের জল সামলিয়ে নিয়ে সেও অতি করুণমুরে বললে, ধন্য।
সেদিন ওর আহারে রুচি রইল না—সমস্ত রাত সেই কাটা ল্যাজের স্বপ্ন দেখলে।
পরদিন শিবুরাম সভায় এসে হাজির। গোঁসাইজি বললেন, কেমন হে শিবু, দেহটা হালকা বোধ হচ্চে তো?
শিবুরাম বললে, আজ্ঞে, খুবই হালকা। কিন্তু মন বলছে, ল্যাজ গেল তবু মানুষের সঙ্গে বর্ণভেদ তো ঘুচল না।
গোঁসাই বললেন, রং মিলিয়ে সবর্ণ হোতে চাও যদি, তবে রোঁয়া ঘুচিয়ে ফেলো।
তিনু নাপিত এল।
পাঁচদিন লাগ্ল খুর বুলিয়ে বুলিয়ে লোমগুলো চেঁচে ফেলতে। রূপ যেটা ফুটে উঠল তা দেখে সভ্যরা সবাই চুপ করে গেল।
শিবুরাম উদ্বিগ্ন হয়ে বললে, মশায়, আপনার কোনো কথা বলেন ন। কেন?
সভ্যরা বললে, আমরা নিজের কীর্ত্তিতে অবাক।
শিবুরাম মনে শান্তি পেল। কাটা ল্যাজ ও চাঁচা রোঁয়ার শোক ভুলে গেল।
১৮