পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 আর, আমি বুঝি জানিনে।

 কী জানো, বলো তো।

 ওরা কখনো চাষী কৈবর্ত্তর মাংস খায় না; বিশেষত যারা গঙ্গার পশ্চিমপারে থাকে। শাস্ত্রে বারণ।

 আর, যার পূব পারে থাকে?

 তারা যদি জেলে কৈবর্ত্ত হয় তো সেটা অতি পবিত্র মাংস। সেটা খাবার নিয়ম বাঁ থাবা দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে।

 বাঁ থাবা কেন।

 ঐটে হচ্চে শুদ্ধরীতি। ওদের পণ্ডিতরা ডান থাবাকে নোংরা বলে। একটি কথা জেনে রাখো দিদি, নাপতিনীদের পরে ওদের ঘেন্না। নাপতিনীরা যে মেয়েদের পায়ে আল্‌তা লাগায়।

 তা লাগালেই বা।

 সাধু বাঘেরা বলে, আলতাটা রক্তের ভান-ওটা আঁচড়ে কামড়ে ছিঁড়ে চিবিয়ে বের করা রক্ত নয়-ওটা মিথ্যাচার। এ রকম কপটাচরণকে ওরা অত্যন্ত নিন্দে করে। একবার একটা বাঘ ঢুকেছিল পাগড়িওয়ালার ঘরেসেখানে ম্যাজেণ্টা গোলা ছিল গামলায়। রক্ত মনে ক’রে মহা খুসি হয়ে মুখ ডুবলে তার মধ্যে। সে একেবারে পাকা রং। বাঘের দাড়ি গোঁফ তার দুই গাল লাল টক্‌টকে হয়ে উঠল। নিবিড় বনে যেখানে বাঘেদের পুরুতপাড়া মোষমারা গ্রামে,—সেইখানে আসতেই ওদের আঁচাড়ি শিরোমণি বলে উঠল,এ কী কাণ্ড, তোমার সমস্ত মুখ লাল কেন। ও লজ্জায় প’ড়ে মিথ্যে ক’রে বললে,—গণ্ডার মেরে তার রক্ত খেয়ে এসেছি। ধরা পড়ে গেল মিথ্যে। পণ্ডিতজি বললে, নখে তো রক্তের চিহ্ন দেখিনে, মুখ শুঁকে বললে, মুখে তো রক্তের গন্ধ নেই।সবাই ব’লে উঠল, ছি ছি! এ তে রক্তও নয়, পিত্তও নয়, মগজও নয় মজ্জাও নয় নিশ্চয় মানুষের পাড়ায় গিয়ে এমন একটা রক্ত খেয়েছে যা নিরামিষ রক্ত-

৫৩