পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বাঘপুঙ্গব-পণ্ডিতের মতে তাহোলে ওবা বিনামন্ত্রে যে জীবকে মারে পরজন্মে সেই জীব হয়েই জন্মায়। ওদের ভাবি ভয় পাছে মানুষ হয়ে জন্মাতে

 কেন।

 ওরা বলে, মানুষের সর্বাঙ্গ টাক-পড়া, কী কুশ্রী! তার পরে, সামান্য একটা লেজ, তাও নেই মানুষের দেহে। পিঠের মাছি তাড়াবার জন্যেই ওদের বিয়ে করতে হয়। আবার দেখো না, ওরা খাড়া দাঁড়িয়ে সঙের মতো দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটে—দেখে আমরা হেসে মরি। আধুনিক বাঘেব মধ্যে সব চেয়ে বড়ো জ্ঞানী শার্দ্দৌল্যতত্ত্বর বলেন, জীবসৃষ্টির শেষের পালায় বিশ্বকর্মার মালমসলা যখন সমস্তই কাবার হয়ে গেল তখনি মানুষ গড়তে তার হঠাৎ সখ হেলো।—তাই বেচারাদের পায়ের তলার জন্যে থাবা দূরে থাক্‌ কয়েক টুকরো খুরের জোগাড় করতে পারলেন না, জুতো পরে তবে ওরা পায়ের লজ্জা নিবারণ করতে পারে—আর গায়ের লজ্জা ঢাকে ওরা কাপড়ে জড়িয়ে। সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ওরাই হোলো লজ্জিত জীব। এত লজ্জা জীবলোকে আব কোথাও নেই।

 বাঘেদের বুঝি ভারি অহঙ্কার।

 ভয়ঙ্কর। সেইজন্যেই তো ওরা এত ক’বে জাত বাঁচিয়ে চলে। জাতের দোহাই পেড়ে একটা বাঘের খাওয়া বন্ধ করেছিল একজন মানুষের মেয়ে,—তাই নিয়ে আমাদের সে একটা ছড়া বানিয়েছে।

 তোমার মতো সে আবার ছড়া বানাতে পাবে না কি।

 তার নিজের বিশ্বাস সে পারে,এই তর্ক নিয়ে তো পুলিস ডাকা যায় না।

 আচ্ছা শোনাও না।

 তবে শোনো।

এক ছিল মােটা কেঁদো বাঘ,
গায়ে তার কালাে কালাে দাগ।

৫৭