পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 এদিকে পাতুখুড়োর গিন্নি এসে বললে, বলি ও পোড়ারমুখো।

 কান জুড়িয়ে গেল। বললুম, বলো বলো আবার বলল, বড়ো মিষ্টি লাগছে, এমন ডাক যে আবার কোনোদিন শুনতে পাব এমন আশাই ছিল না।

 বুড়ি ভাবলে ঠাট্টা করছি, ঝাঁটা আনতে গেল ঘরের মধ্যে। ভয় হোলো, পড়ে-পাওয়া দেহটা খোয়াই বুঝি। বাসায় এসে অয়নাতে মুখ দেখলুম, সমস্ত শরীর উঠল শিউরে। ইচ্ছে করল র‍্যাঁদা দিয়ে মুখটাকে ছুলে নিই।

 গা-হারার গা এল কিন্তু চেহারাহারার চেহারাখানা সাত বাঁও জলের তলায়, তাকে ফিরে পাবার কী উপায়।

 ঠিক এই সময়ে দীর্ঘবিচ্ছেদের পর খিদেটাকে পাওয়া গেল। একেবারে জঠর জুড়ে। সব ক’টা নাড়ী চোঁ চোঁ ক’রে উঠেছে এক সঙ্গে। চোখে দেখতে পাইনে পেটের জ্বালায়। যাকে পাই তাকে খাই গোছের অবস্থা। উঃ কী আনন্দ।

 মনে পড়ল তোমার ঘরে পুপুদিদির নেমন্তন্ন। রেলভাড়ার পয়সা নেই। হেঁটে চলতে সুরু করলুম। চলার অসম্ভব মেহন্নতে কী যে আরাম সে আর কী বলব। স্ফুর্ত্তিতে একেবারে গলদ্‌ঘর্ম্ম। এক এক পা ফেলছি আর মনে মনে বলছি, থামছিনে, থামছিনে, চলছি তো চলছিই। এমন বেদম চলা জীবনে কখনো হয় নি। দাদা, পুরো একখানা গা নিয়ে বসে আছ কেদারায়, বুঝতেই পারো না কষ্টতে যে কী মজা। এই কষ্টে বুঝতে পারা যায় আছি বটে, খুব কষে আছি, ষোলো আনা পেরিয়ে গিয়ে আছি।

 আমি বললুম, সব বুঝলুম, এখন কী করতে চাও বলো।

 করবার দায় তোমারই, নেমন্তন্ন করেছিলে, খাওয়াতে হবে, সে কথা ভুললে চলবে না।

 রাত এখন তিনটে সে কথা তুমিও ভুললে চলবে না।

১০
৭৩