পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গা চুরি করে আমার গাড়িতে উঠতে পাবে না। চারদিক থেকে লোক এল ছুটে, আমাকে পুলিসে ধরে নিয়ে যায় আর কী। জীবনে অনেক নিন্দে শুনেছি কিন্তু এ রকম ওরিজিন্যাল নিন্দে শুনিনি কখনো। গাঁজাখোরের গা চুরি করা। আমার অতি বড়ো প্রাণের বন্ধুও এমন নিন্দে আমার নামে রটায়নি। বাড়ি ফিরে এসে সমস্ত ব্যাপারটা শোনা গেল। এ তোমারি কীর্ত্তি।

 আমারি তো বটে। কী করি বলল। তোমাকে নিয়ে আর কাঁহাতক গল্প বানাই। বয়স হয়ে গেছে, কলমটাকে যেন বাতে ধরল, পুপুদিদির ফরমাসমতে অসম্ভব গল্প বলার হাল্‌কা চাল আর নেই কলমের। তাই এই শেষ গল্পটাতে তোমাকে একেবারে খতম ক’রে দিয়েছি।

 খতম হোতে রাজি নই দাদা। দোহাই তোমার, পুপুদিদির ভয় ভাঙিয়ে দাও। বুঝিয়ে বলল ওটা গল্প।

 বলেছিলুম, কিন্তু ভয় ভাঙতে চায় না। নাড়ীতে জড়িয়ে গেছে। উপায় না দেখে স্বয়ং সেই পাতু গেঁজেলকে আনলুম তার সামনে, উল্টো হোলো ফল। পাতুর গা-খানা প’রে যে তুমিই ঘুরে বেড়াচ্চ তারি প্রমাণ প্রত্যক্ষ হয়ে গেল।

 তাহলে দাদা, গল্পটাকে উলটিয়ে দাও, ধনুষ্টঙ্কারে মরুক পাতু। গাঁজাখোরের গা-খানাকে নিমতলার ঘাটে পুড়িয়ে ফেলো। ঘটা ক’রে তার শ্রাদ্ধ করব, পুপুদিদিকে করব তাতে নেমন্তন্ন; খরচ যত পড়ে দেব নিজের পকেট থেকে। আমি হলুম দিদির গল্পের বহুরূপী, হঠাৎ এত বড়ো পদ থেকে আমাকে অপদস্থ করলে বাঁচব না।

 আচ্ছা গল্পের উল্টোরথে তোমাকে পুপুদিদির ঘরে আবার ফিরিয়ে আনব।

  * * * * *  

 পরদিন সন্ধ্যার সময় সে এল, আমি শুরু করলুম গল্পটা।

৭৬