পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

এমন কথা বলি কী ক’রে। ঠাক্‌রুণকে তো জানি, বন্ধু কম দুঃখ পায়নি, অনেক ঝাঁটা ক্ষয়ে গেছে ওর পিঠে। তার দাম বাঁচালে গাজার খরচে টানাটানি পড়ত না। তাই বলছি হজুর, আদালতে হলপ ক’রে ভদ্রলোকের সর্ব্বনাশ করতে পারব না।

 মোক্তার চোখ রাঙিয়ে বললে, তাহোলে এ লোকটা কে বলো। দ্বিতীয় পাতু বানাবার শক্তি ভগবানেরও নেই।

 গেঁজেলের সর্দ্দার বললে, ঠিক বলেছ বাবা, এরকম ছিষ্টি দৈবাৎ হয়। ভগবান নাকে খৎ দিয়েছেন এমন কাজ আর করবেন না। তবু তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্চি যে একটা কোনো সয়তান ভগবানের পাল্টা জবাব দিয়েছে। একেবারে ওস্তাদের হাতের নকল, পাকা জালিয়াতের কাজ। পাতুর দেহখানা শুকিয়ে শুকিয়ে ওর নাক চিম্‌সিয়ে বেঁকে গিয়েছিল, সেই বঙ্কিমচন্দুরে নাকটি পর্য্যন্ত যেন কেটে ওর মুখের মাঝখানে বসিয়ে দিয়েছে। ওর হাতের চামড়া নকল করতে বোধ করি হাজার চামচিকের ডানা খরচ করতে হয়েছে।

 তুমি দেখলে মকদ্দমা আর টেঁকে না, সাহেবকে বললে, এক হপ্তা সময় দিন, খাঁটি পাতুপক্ষীরাজকে হাজির ক’রে দেব এই আদালতে। তখনি ছুটলে তেলেনিপাড়ার দিঘির ঘাটে। কপাল ভালো, ঠিক তক্ষুনি তোমার দেহটা উঠছে ভেসে। পাতুর দেহ ডাঙায় চিৎ ক’রে ফেলে পুরোনো খোলটা জুড়ে বসলে। মস্ত একটা হাঁপ ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ডাক দিলে —ওরে পাতু।

 তখনি ওর দেহটা উঠল খাড়া হয়ে। পাতু বললে, ভায়া সঙ্গে সঙ্গেই ছিলুম। মনটা অস্থির ছিল গাঁজার মৌতাতে। ইচ্ছে করত আত্মহত্যে করি, কিন্তু সে রাস্তাও তুমি জুড়ে বসেছিলে। বেঁচে যখন ছিলুম তখন বেঁচে থাকবার সখ ছিল যোলো আনা, যেমনি মরেছি অমনি আর যে কোনো মতেই

৭৯