পাতা:সোক্রাটীস (দ্বিতীয় খণ্ড) - রজনীকান্ত গুহ.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইয়ুরোপে ব্যাপ্তিগ্রহের জন্মদাতা, বেকন তাহার যুগান্তরসাধি প্ৰমাণিত করিয়া জ্ঞানানুশীলনের গতি ফিরাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু উভয়ের লক্ষ্যে আকাশপাতাল ব্যবধান। সোফ্র্যাটাস যাহাকে দেখিতেন, তাহাকেই বলিতেন, “দেহের জন্য ভাবিও না, অগ্ৰেই অর্থের জন্য থাটিয়া মরিও না, কিন্তু আত্মা যাহাতে পূর্ণতা লাভ করিতে পারে, তাহারই জন্য যত্নশীল হও ।” (Apology, 17) । বেকন লিখিয়াছেন, মানব যে অবস্থাসমূহের মধ্যে জীবন যাপন কবে, তাহার উন্নতি সম্পাদন করাই জ্ঞানের উদ্দেশ্য। মানুষ যদি নব নব তত্ত্ব আবিষ্কার ও নিত্য নূতন শক্তি সঞ্চয় করিয়া জীবনকে শ্ৰীসম্পন্ন করিতে না পারিল, তবে তাহার জ্ঞানচর্চা নিস্ফল। সোফ্রিটস আত্মার সম্পদকেই পরম সম্পদ বিবেচনা করিতেন ; বেকন যে-পথ নূতন করিয়া খুলিয়া দিয়া গিয়াছেন, তাহার গতি দুঃখনিবৃত্তি ও সুখ-সাধনের দিকে ; এবং তাহার চরম লক্ষ্য ঐহিক সম্পদ লাভ । সোক্রেটসের সহিত বেকনের আর একটী পার্থক্য এই, যে সোক্রেটস প্ৰাকৃতিক বিজ্ঞান উপেক্ষা কবিয়া দর্শনালোচনায় জীবন সমৰ্পণ করিয়াছিলেন ; বেকন দর্শনের প্রতি মনোনিবেশ করেন নাই ; তিনি প্ৰাকৃতিক বিজ্ঞানকেই সর্বোপরি স্থান দিয়াছেন। এই দুই বিষয়ে পার্থক্য প্ৰদৰ্শন করিলাম বলিয়া আমরা যে বেকনের গৌরবের হানি করিলাম, তাহা নয় ; কেন না, মানবের দুঃখহ্রাস ও সুখবৃদ্ধি করিবার চেষ্টা নিন্দনীয় নহে ; এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের চর্চাতে নিমগ্ন হইয়া বিশ্বাসী জ্ঞানার্থ ঈশ্বরের মহিমা দেখিয়া ভক্তিতে বিগলিত হইয়া যাইতে পারে। বেকন নিজে প্ৰাকৃতিক বিজ্ঞানের অনুশীলন করিয়া অনেক নূতন তত্ত্ব আবিষ্কার করেন নাই। কিন্তু তিনি গবেষণার দ্বারা সিদ্ধিলাভ করিয়া মানবজাতির কৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছেন, এমন কথা এখন কেহই বলে না। তিনি জ্ঞানের রাজ্যে মানবের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যে মহতী আশা ও ধারণা পোষণ করিতেন, তাহাই তাহার প্রকৃত গৌরব। (The great and wonderful work which the world owes to him was in the idea, and not in the execution.-R. W. Church, Bacon, p. 178)