পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৮৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বসুন্ধরা।
১৮১

মহা পিপাসার রঙ্গভূমি; রৌদ্রালোকে
জ্বলন্ত বালুকা রাশি সূচি বিঁধে চোখে;
দিগন্তবিস্তৃত যেন ধুলিশয্যা পরে
জরাতুরা বসুন্ধরা লুটাইছে পড়ে’
তপ্তদেহ, উষ্ণশ্বাস বহ্নিজ্বালাময়,
শুষ্ককণ্ঠ, সঙ্গহীন, নিঃশব্দ, নির্দ্দয়!
কতদিন গৃহপ্রান্তে বসি বাতায়নে
দূর দূরান্তের দৃশ্য আঁকিয়াছি মনে
চাহিয়া সম্মুখে;— চারিদিকে শৈলমালা,
মধ্যে নীল সরোবর নিস্তব্ধ নিরালা
স্ফটিক নির্ম্মল স্বচ্ছ; খণ্ড মেঘগণ
মাতৃস্তনপানরত শিশুর মতন
পড়ে আছে শিখর আঁকড়ি’; হিম-রেখা
নীলগিরিশ্রেণীপরে দূরে যায় দেখা
দৃষ্টি রোধ করি’; যেন নিশ্চল নিষেধ
উঠিয়াছে সারি সারি স্বর্গ করি ভেদ
যোগমগ্ন ধূর্জটীর তপোবন-দ্বার!
মনে মনে ভ্রমিয়াছি দূর সিন্ধুপারে
মহামেরু দেশে-যেখানে লয়েছে ধরা
অনন্তকুমারীব্রত, হিমবস্ত্র পরা,
নিঃসঙ্গ, নিস্পৃহ, সর্ব্ব আভরণহীন;
যেথা দীর্ঘ রাত্রি-শেষে ফিরে আসে দিন
শব্দ সঙ্গীতবিহীন; রাত্রি আসে,
ঘুমাবার কেহ নাই,অনন্ত আকাশে

১৬