পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৯৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বসুন্ধরা।
১৮৭

শুনিবারে পাই যেন চিরদিনকার
সঙ্গীদের লক্ষবিধ আনন্দ খেলার
পরিচিত রব! সেথায় ফিরায়ে লহ
মোরে আরবার; দূর কর সে বিরহ
যে বিরহ থেকে থেকে জেগে ওঠে মনে
হেরি যবে সম্মুখেতে সন্ধ্যার কিরণে
বিশাল প্রান্তর, যবে ফিরে গাভীগুলি
দূর গোষ্ঠে—মাঠপথে উড়াইয়া ধূলি
তরু-ঘেরা গ্রাম হতে উঠে ধূম্র-লেখা
সন্ধ্যাকাশে; যবে চন্দ্র দূরে দেয় দেখা
শ্রান্ত পথিকের মত অতি ধীরে ধীরে
নদীপ্রান্তে জনশূন্য বালুকার তীরে;
মনে হয় আপনারে একাকী প্রবাসী
নির্ব্বাসিত; বাহু বাড়াইয়া ধেয়ে আসি
সমস্ত বাহিরখানি লইতে অন্তরে,—
এ আকাশ, এ ধরণী, এই নদী পরে
শুভ্র শান্ত সুপ্ত জ্যোৎস্নারাশি! কিছু নাহি
পারি পরশিতে, শুধু শূন্যে থাকি চাহি
বিষাদ-ব্যাকুল! আমারে ফিরায়ে লহ
সেই সর্ব্বমাঝে, যেথা হতে অহরহ
অঙ্কুরিছে মুকুলিছে মুঞ্জরিছে প্রাণ
শতেক সহস্ররূপে,—গুঞ্জরিছে গান
শতলক্ষসুরে, উচ্ছ্বসি উঠিছে নৃত্য
অসংখ্য ভঙ্গীতে, প্রবাহি যেতেছে চিত্ত