পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
যেতে নাহি দিব।
৭১

মাতৃদুগ্ধ-পরিতৃপ্ত সুখনিদ্রারত
সদ্যোজাত সুকুমার গোবৎসের মত
নীলাম্বরে শুয়ে।—দীপ্ত রৌদ্রে অনাবৃত
যুগযুগান্তরক্লান্ত দিগন্তবিস্তৃত
ধরণীর পানে চেয়ে ফেলিনু নিশ্বাস।


কি গভীর দুঃখে মগ্ন সমস্ত আকাশ,
সমস্ত পৃথিবী! চলিতেছি যতদুর
শুনিতেছি একমাত্র মর্মান্তিক সুর
“যেতে আমি দিব না তোমায়!” ধরণীর
প্রান্ত হতে নীলাভ্রের সর্ব্বপ্রান্ততীর
ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত রবে
“যেতে নাহি দিব! যেতে নাহি দিব।” সবে
কহে “যেতে নাহি দিব!” তৃণ ক্ষুদ্র অতি
তারেও বাঁধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী
কহিছেন প্রাণপণে “যেতে নাহি দিব!”
আয়ুঃক্ষীণ দীপমুখে শিখা নিব’-নিব’
আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে,
কহিতেছে শতবার “যেতে দিব না রে!”
এ অনন্ত চরাচরে স্বৰ্গমর্ত্ত্য ছেয়ে
সব চেয়ে পুরাতন কথা, সব চেয়ে
গভীর ক্রন্দন “যেতে নাহি দিব।” হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়!
চলিতেছে এমনি অনাদিকাল হতে।