পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(৮)

সেইরূপ ললিতপদবিন্যাসের সহিত অসামান্য মাধুর্য্যগুণের উৎকর্ষ লক্ষিত হয়। সীতার বনবাস ও শকুন্তলা, গদ্যরচনায় তাহার অসা- মান্য ক্ষমতার নিদর্শনস্থল। তিনি বালক ও বালিকাদিগের শিক্ষার জন্য অনেক গ্রন্থ লিখিয়া গিয়াছেন; প্রতি গ্রন্থই তাহার অসাধারণ রচনাচাতুরী ও শব্দমাধুরীর জন্য প্রসিদ্ধ হইয়াছে। তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজী গ্রন্থ হইতে বিষয়সংগ্রহ করিয়াছেন বটে, কিন্তু তাহার ভাষা তদীয় অদ্বিতীয় সম্পত্তি। উহা প্রসন্ন-সলিলা জানুবীর জলপ্রবাহের ন্যায় = নিয়তই জীবনতোষিণী। বিদ্যাসাগর মহাশয় কেবল ভাষার শ্রবৃদ্ধিসাধন করিয়াই নিরস্ত হয়েন নাই; স্বল্পায়াসে ও সুপ্রণাণী- ক্রমে ভাষাশিক্ষারও সদুপায় করিয়া গিয়াছেন। শিক্ষার বিস্তারে তিনি আজীবন যত্নশীল ছিলেন। এ অংশে বালক, বালিকা, প্রৌঢ় কেহই তাহার নিকটে উপেক্ষণীয় ছিল না। তাহার বন্দোবস্তের গুণে এই মহানগরীর বীটন বালিকাবিদ্যালয়েব কার্য্য প্রথমে সুনিয়মে সম্পন্ন হয়—তাহার যত্নাতিশয়ে ভিন্ন ভিন্ন জেলার অনেকগুলি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়—তাহার প্রস্তাবক্রমে নর্মাল বিদ্যালয়ের সৃষ্টি হয়। বালিকাদিগের পাঠোপযোর্গী গ্রহ না থাকাতে তিনি বর্ণপরিচয়প্রভৃতি পুস্তক প্রচার করেন। সংস্কৃতশিক্ষার্থারা ব্যাকরণ ও অমরকোষ অভিধান পড়িয়া, কাব্যপাঠে প্রবৃত্ত হইত। এক ব্যাকরণপাঠেই তাঁহাদের অনেক সময় সাইত। এজন্য বিদ্যাসাগর মহাশয় উপক্রমণিকাপ্রভৃতি প্রণয়ন ও ঋজুপাঠপ্রভৃতি প্রচার করিয়া, সংস্কৃতশিক্ষার পথ সুগম করিয়া দেন। এইরূপে শিক্ষা সংক্রান্ত প্রত্যেক কার্য্যেই তাঁহার অসামান্য যত্নের পরিচয় পাওয়া যায়। এই কার্য্যে তিনি প্রভূত অর্থব্যয়েও কুণ্ঠিত হয়েন নাই।

 জাতীয় সাহিত্যের উন্নতিসাধন-জাতীয় ভাষার শ্রীবৃদ্ধিসম্পাদনের সহিত বিদ্যাসাগর মহাশয় জাতীয় পরিচ্ছদ ও জাতীয় ভাবের