পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(১২)

তাহার উজ্জ্বল চক্ষু দুইটি উজ্জ্বলতর হই, এবং তাহা হইতে মুক্তাফলসদৃশ অশ্রুবিন্দু নির্গত হইয়া, গণ্ডদেশ প্লাবিত করিত। কিন্তু অশ্রু প্রবাহের সহিত তাহার হৃদয়নিহিত যাতনার অবসান হইত না। তিনি যতক্ষণ দুঃখীর দুঃখমোচন করিতে না পারিতেন, ততক্ষণ স্থির থাকিতে পারিতেন না। এইরূপ দয়াশীল পুরুষের কোমল হৃদয়, অনাথা বালবিধবা ও পতিবিচ্ছেদবিধুরা কুলকামিনীদিগের দুর্দশায় সহজেই বিচলিত হইয়াছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় এই, অভাগিনীদিগের দুঃখমোচনে বদ্ধপরিকর হইলেও, উচ্ছঙ্খলতাপ্রকাশ করেন নাই। তিনি এ বিষয়ে শাস্ত্রের শরণাপন্ন হইয়াছিলেন, এবং স্বয়ং যে ভাবে শাস্ত্র বুঝিয়াছিলেন, সেই ভাবেই সাধারণকে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। ইহাতে তাহার সরলতার সম্যক্ পরিচয় পাওয়া যায়। তাহার বিধবাবিবাহবিষয়ক ও বহুবিবাহসম্বন্ধীয় পুস্তক, তদীয় অসামান্য গবেষণা, পাণ্ডিত্য ও বিচারনৈপুণ্যের অদ্বিতীয় দৃষ্টান্তস্বরূপ। এই দুই গ্রন্থ লিখিবার সময়ে তাঁহাকে বিস্তর হস্তলিখিত পুথির আদ্যোপান্ত পাঠ করিতে হইয়াছিল।বিধবাবিবাহবিষয়ক গ্রন্থের রচনাসময়ে তিনি যেরূপ অসাধারণ অধ্যবসায়ের পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহা শুনিলে বিস্মিত হইতে হয়। সংস্কৃত পুথির পাঠোদ্ধার ও উহার অর্থসঙ্গতি করিতে তাহাকে অনেক পরিশ্রম করিতে হইত। তিনি সংস্কৃত কলেজের পুস্তকালয়ে বসিয়া, শাস্ত্রের বচন সংগ্রহ করিতেন, এবং উহার অর্থ লিখিতেন। কথিত আছে, এক দিন অনেক ভাবিয়াও কোন বচনের অর্থপরিগ্রহ করিতে পারিলেন না। এদিকে সন্ধ্যা অতীত হইল। অগত্যা লেখায় নিরস্ত হইয়া, ভাবিতে ভাবিতে বাসগৃহে চলিলেন। কিয়দ্র গেলে সহসা তাঁহার মুখমণ্ডল প্রসন্ন হইল। অন্ধকারময় স্থানে পরিভ্রমণসময়ে পথিক সহসা সূর্যের আলোক পাইনে যেরূপ প্রফুল্ল হয়, তিনিও পূর্বোক্ত