পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(১৪)

বৈধব্য দুঃখ দূর করিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হইয়া উঠেন। তিনি এই প্রসঙ্গে এক দিন দৃঢ়তার সহিত কহিয়াছিলেন, “মাতাপিতার অনুমতি না পাইলে, আমি কখনও এই কার্যে উদ্যত হইতাম না; অন্তত তাহারা যতদিন জীবিত থাকিতেন, ততদিন এ বিষয়ে নিরস্ত থাকিতাম।” পরমাত্মনিষ্ঠ সাধক যেমন আপনার সাধনায় সিদ্ধিলাভের জন্য, তদগতচিত্তে বরণীয় দেবতার অনুমতি ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন তিনিও সেইরূপ প্রত্যেক বিষয়ে পরমদেবতাস্বরূপ মাতা পিতার সম্মতির প্রতীক্ষায় থাকিতেন। এখন আমাদের সমাজে যাহাদের শিক্ষাভিমান জন্মিয়াছে, প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধবাদী হইয়া যাহারা জলদগম্ভীর স্বরে “সংস্কার, সংস্কার” বলিয়া চারি দিক কম্পিত করিয়া তুলিতেছেন, তাহাদিগকে অনেক সময়ে জনকজননীর মুখের দিকে দৃপাত করিতে দেখা যায় না। কঠোরকর্তব্যপালনের দোহাই দিয়া, তাহারা অবলীলাক্রমে ও অসঙ্কুচিতচিত্তে মাতাপিতার বুকে শেল হানিয়া থাকেন। পিতা একান্তে বসিয়া নয়নজলে গণ্ডদেশ প্লাবিত করিতেছেন, মাতা দুঃসহ দুঃখে অভিভূত হইয়াছেন—নিদারুণ শোকাগ্নি তুষানলো, ন্যায় অলক্ষ্যভাবে তাঁহাদের হৃদয়ের প্রতি স্তরে প্রতি মুহূর্তে প্রসারিত হই তেছে, শিক্ষিতাভিমানী পুত্র কিন্তু কঠোরকর্তব্যপালনে কিছুতেই নিরস্ত নহেন। পুত্রের এই কঠোর কর্তব্যপালনপ্রতিজ্ঞায় এখন অনেক স্থলে পিতা শোকশল্যের অভিঘাতে মর্মাহত হইতেছেন — মাতা প্রীতির অবলম্ব, মেহের পুত্তলী তনয় হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া, হাহাকার ও শিরে করাঘাত করিতেছেন। কিন্তু মহাত্মা বিদ্যাসাগর মহোদয় পিতৃভক্তিতে পবিত্র হইতে পবিত্রতর—মাতৃসেবায় মহৎ হইতে মহত্তর ছিলেন। তিনি অবলীলাক্রমে সর্বস্ব বিসর্জন কলিতে পারিতেন, পৃথিবীতে যাহা কিছু সুখ পদ—সাহা কিছু মনো-